ঢাকা সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইনসাফের বাংলাদেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না: হাদির মেজো ভাই

ইনসাফের বাংলাদেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না: হাদির মেজো ভাই

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অসমাপ্ত বিপ্লবকে সমাপ্ত করতে এবং ইনসাফের বাংলাদেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত দেশপ্রেমিক জনতাকে আন্দোলন জারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তার মেজো ভাই ওমর বিন হাদি।

তিনি বলেছেন, যদি আপনারা হাদিকে ভালোবাসেন, হাদির হত্যার বিচার চান, ওই শাহবাগকে ফ্যাসিবাদমুক্ত, ভারতীয় আধিপত্যবাদমুক্ত করতে চান তাহলে আপনাদেরকে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। যতদিন পর্যন্ত ইনসাফের বাংলাদেশ গঠন না হবে, আমরা রাজপথ ছাড়ব না।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইয়ের বীর যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির শাহাদত উপলক্ষ্যে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ওমর বিন হাদি বলেন, প্রিয় বিপ্লবী জনতা, আমি এখানে ওসমান হাদির ভাই হিসেবে আসিনি, আমি হাদির একজন সহযোদ্ধা ছিলাম। হাদি যখন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, একই রিকশার বাম পাশে আমি বসা ছিলাম। হাদি ডান পাশ থেকে সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, কান্না করার জন্য আমরা রাজপথে নামিনি। শহীদ ওসমান বিন হাদি যখন জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তখন তার স্ত্রী-সন্তান ছিল। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত যখন বাসায় ফিরতে পারেননি, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বারবার বলা হতো—পরিবারের কথা চিন্তা করতে হবে, নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হবে।

‘তার (ওসমান হাদি) একটাই জবাব ছিল—আমাকে আমার আল্লাহই রক্ষা করবেন। আমি যদি চলে যাই এ দেশের ১৮ কোটি জনতা আমার পরিবারকে দেখে রাখবে। এর চেয়ে বড় নিরাপত্তা আর কেউ দিতে পারবে না। হাদি বলেছিল, ‘যদি আমি আমার রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাই আপনি শহীদের ভাই হবেন। আমার মাকে বলেছিল আমি যদি মা চলে যাই আপনি শহীদের মা হবেন এর চেয়ে আর গর্বের কিছু নাই।’

হাদির মেজো ভাই বলেন, কিন্তু আমি শহীদের ভাই হতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম রাজপথে বিপ্লবী ওসমানের পাশে থেকে এই বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদমুক্ত করতে। আমি চেয়েছিলাম ইনসাফের বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত গঠন না হবে, আমরা রাজপথ ছাড়ব না। কিন্তু আজ ওসমান চলে গেছেন। আল্লাহ ওকে তার সর্বোচ্চ পুরস্কার দিয়ে নিয়ে গেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর সে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তী শুক্রবার রাতে ইন্তেকাল করেছেন সিঙ্গাপুরে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবার, ইনকিলাব মঞ্চের ভাই-ব্রাদাররা, আমরা ঘটনার আকস্মিকতায় দুমড়েমুচড়ে গেছি। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। জানি না আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কি না। আমাদের শহীদ পরিবার, ইনকিলাব মঞ্চ, ওসমান গণির লাখো লাখো ভালোবাসার জনগণ, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা সবার কাছে আমার একটাই দাবি— ওসমান হাদি যে বিপ্লব, যে বিপ্লবী আন্দোলন করেছিলেন, সে যে আন্দোলনের জন্য শহীদ হয়েছেন পরবর্তীতে তার অসমাপ্ত বিপ্লবকে আপনারাই সমাপ্ত করবেন; ইনশাআল্লাহ।

ওমর বিন হাদি বলেন, আমরা ওসমান হাদির পক্ষ থেকে কোনো পারিবারিক আর্থিক সহযোগিতা চাই না, কোনো অনুদান চাই না, শুধু একটাই চাওয়া—ওসমান হাদির অসমাপ্ত বিপ্লবকে আপনারা সমাপ্ত করবেন। আপনারা যদি রাজি থাকেন, আমার সাথে ওয়াদা করেন—ইনসাফের বাংলাদেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত আপনারা শান্ত হবেন না।

শাহবাগী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ওসমান হাদির লড়াইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ওসমান হাদি শাহবাগে দাঁড়িয়ে বলতেন, এই শাহবাগ হাজার বছরের মুসলমানদের কাছ থেকে এই বঙ্গভূমির স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, এই শাহবাগে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে, আমি এই শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদকে রুখে দেব। এই শাহবাগে বসেই আমি নারায়ে তাকবির স্লোগান দেব।

হাদির মেজো ভাই বলেন, যদি আপনারা হাদিকে ভালোবাসেন, হাদির হত্যার বিচার চান, ওই শাহবাগকে ফ্যাসিবাদমুক্ত, ভারতীয় আধিপত্যবাদমুক্ত করতে চান তাহলে আপনাদেরকে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।

হাদির সন্তান, স্ত্রীর ও ছোট বোনের জন্যও দোয়া চেয়ে ওমর বিন হাদি বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমরা দুই ভাই অসহায় ছিলাম। আমার ছোট বোন আমাদেরকে বড় করেছেন। তার বেতনের টাকা দিয়ে আমাদেরকে পড়াশোনা করিয়েছেন। ও খুব বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে। হাদি... খাস করে ওর জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

ওমর বিন হাদি,শরিফ ওসমান বিন হাদি,ইনসাফ,বাংলাদেশ,আন্দোলন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত