অনলাইন সংস্করণ
১৯:১০, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা কখনও মুক্তি পাবেন না। বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার কারণে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে তাঁকে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো।
বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জানাজার আগে লাখো মানুষের সামনে খালেদা জিয়ার জীবনের নানা ঘটনার কথা তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ বছরের বেশি সময় অন্ধকার কারাগারে আবদ্ধ থাকার সময় উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। সমগ্র দেশবাসী সাক্ষী- হেঁটে তিনি কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু নির্জন কারাগার থেকে বের হন চরম অসুস্থতা নিয়ে। দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের মতে, পরবর্তীতে গৃহবন্দির চার বছর তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার কারণেই অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে তাঁকে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো। তাই এই মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা কখনো মুক্তি পাবেন না।
খালেদা জিয়া সম্পর্কে নজরুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং দেশের স্বার্থে অননমনীয়তার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ব্যক্তি শত্রু হিসেবে গণ্য করে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এমনকি তথাকথিত এক-এগারো সরকারের সময় দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা কেবল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দেশনেত্রীকে তাঁর শহীদ স্বামীর স্মৃতিবিজরিত বাড়ি থেকে উৎখাত করে। মিথ্যা অভিযোগে ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবুও আধিপত্যবাদী অপরাজনীতির সঙ্গে তিনি আপস করেননি। আপস করেননি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা ভোটাধিকারের প্রশ্নে। ফলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ফ্যাসিস্ট শাসনবিরোধী লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজ দেশনেত্রী সব অভিযোগ থেকে মুক্ত। লক্ষ কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে জানাজায় আমাদের সামনে আছেন। অন্যদিকে যারা জেলে পাঠিয়েছে, যারা তাঁকে গৃহহীন করেছে, তারা রান্না করা খাবার খেতে পারেনি, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। মাথার ওপর ঝুলছে মৃত্যু পরোয়ানা। এরশাদকে ভোগ করতে হয়েছে দীর্ঘ কারাবাস, এক-এগারো সরকারের প্রধান ব্যক্তিরাও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
জানাজার আগে নজরুল ইসলাম খানের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, খালেদা জিয়া খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন। ফুলের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ অনুরাগ। এ কারণে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশ থাকতো সুশোভিত। ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবন্ধ হন খালেদা জিয়া। তাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আরেক পুত্র আরাফাত রহমান আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৫ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে প্রকৃতপক্ষে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে কতিপয় বিপথগামী সেনাদের হাতে জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণের পর দলের মনোবল ভেঙে পড়ে। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম জিয়া রাজনীতিতে যোগদান করেন। তাঁর রাজনীতিতে যোগদান ছিল আকস্মিক, কিন্তু তা ছিল অনিবার্য। তিনি দলের ভাইস চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এরপর দলীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ৪১ বছরই বিএনপির শীর্ষ নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯৯১ সালে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। মানুষের কাছে থেকে পান আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে তাঁর জীবনের শেষ অবধি কেউ আপসে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি থেকেছেন জনগণের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। তিনি জনগণের ভালোবাসায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনবার।