ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাজারো স্যাটেলাইটের ভিড়ে মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণাই দায়

হাজারো স্যাটেলাইটের ভিড়ে মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণাই দায়

দ্রুত ও আরও বিস্তৃত পরিসরে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে তা মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণাকে দিন দিন কঠিন করে তুলেছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে সাধারণভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায় না সেখানে দ্রুত ইন্টারনেট সরবরাহের লক্ষ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইট তৈরি করেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। এজন্য গত কয়েক বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে কোম্পানিটি, যাতে পুরো পৃথিবীকে ইন্টারনেট সংকেতে ঢেকে ফেলা যায়।

গবেষকরা বলছেন, রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজে বাধা তৈরি করছে এসব স্যাটেলাইট। ফলে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সমস্যায় পড়ছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। এসব স্যাটেলাইট থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু সংকেত বেরিয়ে আসে, যা মহাবিশ্ব দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা যে ক্ষীণ বিভিন্ন রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করেন সেগুলোকে ঢেকে ফেলে। নতুন এ গবেষণাটিতে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পের ওপর নজর দিয়েছেন ‘কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। কারণ কক্ষপথে সবচেয়ে বেশি স্যাটেলাইট তাদেরই। তবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুত ও বড় পরিসরে ইন্টারনেট সরবরাহের পরিকল্পনা করছে এমন আরও অনেক কোম্পানির ওপরও নজর দিয়েছেন তারা। এ গবেষণায় ‘স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে’ টেলিস্কোপের প্রাথমিক সংস্করণ ব্যবহার করে আকাশের ৭ কোটি ৬০ লাখ ছবি সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেটি এ দশকের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণ হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সংবেদনশীল রেডিও টেলিস্কোপ হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট। সেইসব তথ্যের মধ্যে এক হাজার আটশ ৬টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট থেকে এক লাখ ১২ হাজারেরও বেশি রেডিও সংকেত শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রেডিও সংকেত পর্যবেক্ষণ করাকে কঠিন করে তুলতে পারে। কারণ মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার জন্য এসব রেডিও সংকেতের ওপর নির্ভর করেন তারা।

এ গবেষণার প্রধান গবেষক ডিলান গ্রিগ বলেছেন, ‘রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য স্টারলিংকই সবচেয়ে বড় ও বেশি বাধা তৈরি করছে। গবেষণার কেবল চার মাসের মধ্যেই স্টারলিংক চারশ ৭৭টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথে, যা বাধার কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘কিছু তথ্যের মধ্যে আমরা দেখেছি আকাশের ছবি তোলার সময় আমাদের ছবিগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের কারণে ছবি বা তথ্যের গুণমানে বাধা তৈরি হয়েছিল।’ এসব সংকেতের মধ্যে অনেকগুলোই স্যাটেলাইট থেকে ইচ্ছা করে পাঠানো হয়নি এবং এগুলো প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে জোরালোভাবে আসছিল। ফলে গবেষকদের জন্য সেগুলো আলাদা করে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রিগ বলেছেন, ‘কিছু স্যাটেলাইট এমন ফ্রিকোয়েন্সিতে সংকেত পাঠাচ্ছে যেখানে কোনো সংকেত থাকার কথাই নয়। যেমন- আমরা সাতশ ৩টি স্যাটেলাইটকে ১৫০.৮ মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে সংকেত পাঠাতে দেখেছি, যা রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য নিরাপদ রাখা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট করা নিরাপদ এলাকার বাইরেও সংকেত ছড়াচ্ছে এসব সংকেত, যা সমস্যা তৈরি করছে। ‘কারণ স্যাটেলাইটের ভেতরের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মতো অংশ থেকে এসব সংকেত অনিচ্ছাকৃতভাবে বেরিয়ে আসে, যেগুলো কোনো পরিকল্পিত বা উদ্দেশ্যপূর্ণ সংকেত নয়। ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পক্ষে এগুলো আগেভাগে বোঝা বা সেগুলোকে দূর করার বিষয়টি কঠিন।’ গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, স্যাটেলাইটের সংকেতের কারণে তৈরি হওয়া এই বাধা একসময় মহাবিশ্বের গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলো বোঝাকে পুরোপুরি অসম্ভব করে তুলতে পারে। এ গবেষণার সহ-লেখক স্টিভেন টিংগে বলেছেন, ‘আমরা এক সোনালী যুগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছি, যেখানে স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে আমাদের বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করবে।

যেমন- প্রথমবারের মতো তারা কীভাবে তৈরি হয়েছিল, ডার্ক ম্যাটার কী ও আইনস্টাইনের বিভিন্ন তত্ত্বও এতে পরীক্ষা করা যাবে। ‘তবে এর সাফল্যের জন্য স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারের নীরবতা প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের সুবিধা বাড়ানোর গুরুত্ব আমরা বুঝি। তবে এর পাশাপাশি আমাদের এমনভাবে এগোতে হবে যেন বিজ্ঞানের ক্ষতি না হয়। দুইয়ের মধ্যে আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সেই ভারসাম্য তৈরি হয় সমস্যাটিকে বোঝার মধ্যদিয়ে, যা আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত