ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঢাকাকে বাঁচাতে এখনই ড্যাপ সংশোধন দরকার: স্থপতি ইনস্টিটিউট

ঢাকাকে বাঁচাতে এখনই ড্যাপ সংশোধন দরকার: স্থপতি ইনস্টিটিউট

ঢাকাকে বসবাসযোগ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখতে হলে বর্তমান বৈষম্যমূলক ও জনবিরোধী ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অবিলম্বে বাতিল বা সংশোধন করতে হবে—এমন দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা।

‘জনবৈরী ড্যাপ, বৈষম্যপূর্ণ পরিকল্পনা: নিম্ন নাগরিক বাসযোগ্যতা ও বিপন্ন পরিবেশ’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে ড্যাপ ২০২২–২০৩৫ পরিকল্পনার ১২টি আইনি ও তথ্যগত ত্রুটি তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ড. মাসুদ উর রশিদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি স্থপতি ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি স্থপতি খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, সহসভাপতি স্থপতি নওয়াজীশ মাহবুব, সম্পাদক স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ, সম্পাদক স্থপতি কাজী শামীমা শারমিন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ড্যাপ গণশুনানি উপেক্ষা করে অল্প সময়ের মধ্যে কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তৈরি করা হয়েছে। এতে করে ভবন নির্মাণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, জনভোগান্তি বেড়েছে এবং নির্মাণ শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, বর্তমান ড্যাপে অসংখ্য ভুল তথ্য রয়েছে, যা ঢাকার বাস্তবতা প্রতিফলিত করে না। এই ড্যাপ বাতিল করে নতুন করে ত্রিমাত্রিক জরিপভিত্তিক ও হালনাগাদ তথ্যসহ একটি অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ইতোমধ্যে স্থপতি ইনস্টিটিউট সরকারের কাছে নতুন ড্যাপ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংগঠনের ভাষ্য মতে, ড্যাপ বাস্তবায়নের আগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী পুরো ঢাকা শহরের জন্য সমান নীতিমালা কার্যকর ছিল। কিন্তু ড্যাপ চালুর পর নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে এলাকা ভাগ করে গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আর রায়েরবাজার, বাড্ডা, পুরান ঢাকা, মিরপুরের মতো এলাকাগুলোকে আরও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিকে বাসযোগ্যতার দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

তারা বলেন, এমন নীতি আইনি হলেও সামাজিকভাবে অবিচারমূলক। আইনের এমন রূপ হওয়া উচিত, যা জনগণ মানতে আগ্রহী হয়। কিন্তু ড্যাপের আইন মানুষকে ব্যত্যয় ঘটাতে বাধ্য করছে।

ড্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটির কথা তুলে ধরে বলা হয়, এই পরিকল্পনায় কাঠামোগত পরিকল্পনার প্রথম দুই ধাপ—স্ট্রাকচার প্ল্যান ও আরবান এরিয়া প্ল্যান—পূর্বে প্রণয়ন না করেই সরাসরি তৃতীয় ধাপ, অর্থাৎ ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা আইনি ব্যত্যয়।

সংগঠনটি আরও অভিযোগ করে, বর্তমান ড্যাপে জলাধার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে প্লাবনভূমিতে নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে শহরে বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা বাড়বে। কৃষিজমিতে সাময়িক স্থাপনা গড়ার অনুমতি দিয়ে কৃষি জমি ধ্বংসের পথও উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

তারা আরও জানান, বর্তমান ড্যাপে পার্কিংয়ের নিয়ম কঠোর করায় ভবন নির্মাতা সড়কে গাড়ি পার্ক করতে বাধ্য হচ্ছেন, এতে করে শহরের যানজট বেড়েছে। এমনকি ফুটপাতে নির্ধারিত ফি দিয়ে দোকান করার বৈধতা দেওয়ায় পথচারীরা চলাফেরায় বিপাকে পড়ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১১ সালে পুরান ঢাকার জনঘনত্ব ছিল প্রতি একর ৪৫০ জন, অথচ ড্যাপে ২০২৫ সালে তা কমিয়ে ৩৬৭ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে—এই কমে যাওয়া জনসংখ্যা কোথায় যাবে?

স্থপতি ইনস্টিটিউটের দাবি, বর্তমান ড্যাপ বাতিল করে দুর্যোগ সংবেদনশীল, পরিবেশবান্ধব, বৈষম্যহীন, এবং আধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অংশগ্রহণমূলক নতুন একটি তিন ধাপভিত্তিক মহাপরিকল্পনা (স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান ও ড্যাপ) প্রণয়ন করতে হবে।

এই পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, এসডিজি বাস্তবায়ন, দুর্যোগ সহনশীলতা, শূন্য কার্বন নির্গমনসহ সব আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার যুক্ত করতে হবে।

তারা বলেন, বহু বছর ধরে রাজউকের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে কোনো ফল না পাওয়ায় আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণের সামনে কথা বলছেন তারা। জনদুর্ভোগ এড়াতে, বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে এবং নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের স্বার্থ রক্ষায় এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

স্থপতি ইনস্টিটিউট,ড্যাপ সংশোধন,ঢাকা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত