মেঘনা পাড়ের কবি- শফিকুর রহমান সবুজ- আপাদমস্তক একজন শিশুসাহিত্যিক, সময়ের সচল লেখক- নন্দিত ছড়াকার।
সাধারণভাবে, ছড়া বলতে ছোটদের কবিতা বা ছড়াকে বোঝায়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ছড়া হলো ঝর্ণার মতো, আর কবিতা হলো নদীর মতো, ছড়া মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাধারণত স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। এটি সাহিত্যের একটি প্রাচীন শাখা। ছড়ার মূল বৈশিষ্ট হলো মিলনযুক্ত শব্দও সহজ বোধ্য ভাষা।
যা শিশুদের দুষ্ট মিষ্ট মজাদার শব্দে মনকে প্রফুল্লতা দেবে শিশুরা অধিক আনন্দরস দরদ নিয়ে পড়ে শিশুরা হলো দিলখোলা কর্ণফুলী, শিশুরা,শব্দের ডানায় চড়ে রঙিন প্রজাপতির মতো কিংবা নাচছে ফড়িং হতে উড়ে বেড়াই ঘাস ফড়িংয়ের মাটে, খোলা জানালা উঁকি মেরে ফিক করে খিলখিলিয়ে হাসে পরীর সঙ্গে জোসনা রাতে।
তাই শিশুতোষ ছড়া হতে হয় নরম তুলার মতো, শব্দে কোন জঠিলতা গণিতের মতো ঘষাঘষি নেই। যেমনটি বলেছিল কবি নজরুল- থাকব নাতো বন্ধ ঘরে,
দেখবো এবার জগৎটাকে, রবীঠাকুরের বীরপুরুষ, জসিম উদ্দিনের মামার বাড়ি, আল মাহমুদের পাখির কাছে ফুলের কাছে, সুফিয়া কামালের ইরল বিরল। এ ছড়াগুলো আমাদের মুখে মুখে উচ্চারিত মস্তিকে ধারণ হৃদয়ে গাঁথিত।
‘নাচছে ফড়িং’ কবির ছড়া প্রতিটি উপমা শব্দকোষ পঙক্তিগুলো সাজিয়েছেন কবির কলমের ডগায় সমাজমনস্ক আমাদের যাপিত জীবন তথা রূপ বাস্তবতার ছান্দিক ও সহজিয়া উচ্চারণ তাঁর প্রথম ছড়াগ্রন্থ ‘নাচছে ফড়িং’ খুব চমৎকার নাম। ছন্দপতন ভেঙেচুরে অন্ত্যমিলে নতুনরূপে অনবদ্য সৃষ্টি পাঠকের হাতে তুলে দিলেন চকচকে রঙিন প্রচ্ছদের ছড়াগ্রন্থ ছড়া দিয়ে কবির শুরু বর্তমানে ও তিনি ছোটদের উপযোগী সাহিত্য সৃষ্টিতে এক নিবেদিত প্রাণ।
ছড়া কিংবা কিশোর কবিতা শিশুসাহিত্যে যদি মনকে নাড়া দিতে না পারে, যদি আনন্দের উপকরণ না হয় তাহলে সে শিশুসাহিত্য সমৃদ্ধ সাহিত্য হিসাবে মূল্যায়িত হয় না। শফিকুর রহমান সবুজের ছড়াগ্রন্থ তেমনি সব বয়সের পাঠকরা এর ভোক্তা, গ্রহণ করেন তার নির্মল স্বাদ। তিনি ভাবনায়-আবেগে স্বদেশের চিত্র আঁকেন। প্রতিটি ছড়া বাস্তবতার দূর্দান্ত চিত্র সহসা জীবন্ত হয়ে ওঠে- ‘কবি শফিকুর রহমান সবুজ এর প্রথম ছড়াগ্রন্থ মোট ২০টি ছড়া নিয়ে সাজানো গ্রন্থ বেশ চমৎকার বৈচিত্র্যময়। তার ছড়া, ভাষার স্বচ্ছলতা জলের মতো সহজ সরল, ফুলের মতো মিষ্টি।
পাঠকের মনে চাপ সৃষ্টি হয় না পাঠক বুঝতে পারে। লেখাগুলোর আড়ালে এঁকেছেন কিশোর ছড়াগল্পের রুপও স্বরুপ। তার ছড়া কবিতা পড়তে আমাদের ভাবতে গেলে মনের মধ্যে একটা চলমান দৃশ্যের জন্ম হয়, শৈশবের মনে পড়ে যায় খোলা মাট, কৈশোর মনের চাওয়া, পাওয়া, খোলা আকাশ, কৈশোর জীবনে ফিরে যাওয়া, সমকালীন চিত্র, কিংবা সন্ধ্যার আবছা আলো, ছড়া পড়তে পড়তে কারও সামনে খুলে যাবে নতুন কিছু সৃষ্টির জগৎ।
ছড়াগ্রন্থ- ‘নাচছে ফড়িং’ ভালোলাগা কিছু ছড়া...
যেমন- সবার প্রিয় ফুল, মায়ের হাসি মুখ, ছোট্ট খুকি, মনপাখি, মক্তবে সব আয়, রোদের ঝিলিক, নাচছে ফড়িং, মিষ্টি বুড়ি, উড়ছে ঘুড়ি, দোয়েল পাখি, মেঘনা নদীর কূল, মিথ্যা বলা মহাপাপ, শরৎ মানে, আঁকবে, বাঁচতে যদি চাও, সফলতার মই, আঁকছে খুকি, ঘড়ি, একুশের গান, ঈদের জামা গায়।
নাচছে ফড়িং ছড়াগ্রন্থ থেকে কিছু চমৎকার
পঙক্তি পড়া যাক...
ঈদের জামা গায়-চাঁদ ওঠেছে, চাঁদ ওঠেছে/ কালকে হবে ঈদ/ এই খুশিতে খোকাণ্ডখুকির /দুই চোখে নাই নিদ/ ঈদ মানে আনন্দ। ছড়াটি শিশুমনকে নিয়ে যায় এক কল্পনার রাজ্যে। ছোট ছোট খোকাণ্ডখুকি লাল-নীল-রঙের জামা পরে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় এ ছড়ার চমৎকার একটি পঙক্তি-ঈদের জামা গায়- ছড়াটিতে ঈদের আনন্দের কথা উঠে এসেছে।
কবির ভাষায় বলি, একটা ছড়া লিখি যখন নিজকে ভাবি হিরো, ডাকসাইটে বোদ্ধা পাঠক দিক না দশে জিরো। জীবননান্দ ভাষায় যদি বলি কেউ কেউ কবি সবাই কবি নয় ,সব কবিতা কবিতা হয় না। তাতে কি জ্ঞােেনর প্রসার হবে?
তার বাইরে শেখার অনেক বাকি তেমনি যার লেখা তার, হোক না ভালো মন্দ। কেমন করে সাগর ফুঁসে ওঠে এ দৃশ্যটা সাগর পাড়ে গেলে দেখবে জলের ছোটাছুটি ঢেঊয়ের নাচন কেমন করে খেলে। তেমনি কিছু ছড়া দৃশ্যময় সহজ সরল ছন্দে, মনের মতো করে রচনা করেছেন কবি শফিকুর রহমান সবুজ এখানে কবির স্বার্থকতা।
ছোট্ট খুকি- আম্মা আমি নইকো ছোট /এখন অনেক বড়ো/প্লীজ আমার হাতের আঙুল একটু করে ধরো/তোমার মতো বড়ো হতে কী কী আমার চায়?
পায়ের নিচে চেয়ার রেখে ধরবো যে তোমায়।
মজার একটা ছড়া পড়লাম। ছড়াটি আমাদের রঙিন শৈশবের কথা মনে করে দেয়। মায়ের সঙ্গে আমাদের বন্ধন মায়ের জন্যে আমরা পরিশুদ্ধ। একটি দূরন্ত শিশুর চরিত্র ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অপূর্ব বিষয় ভাব,শব্দশিল্প, উপমা নৈপুণ্য ঝরঝরে সৌন্দর্যরূপ আঁকেন প্রাঞ্জন এবং নিবিড় মমতায় কবিতাটিতে বিদ্যামান।
মক্তবে সব আয়-আলিফ, বা, তা পড়তে খোকা/ মক্তবে রোজ যায়/ আলিফ, বা, তাঁর সাথে হুজুর আদবটাও শেখায়।
ছড়াটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। শিশুরা আদব শিক্ষা শিখাতো মক্তবের থেকে এখন আধুনিক কিছু মানুষের এমন চারিত্রিক দোষ তারা যেন সবজান্তা। ছড়ায় বিস্ময়ে কপোকথন অসাধারণ। কবিতায় কবি এমনভাবে পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন শিক্ষা প্রতিষঠানের চিত্র এঁকেছেন, ছড়া পড়তে পড়তে আমাদের জীবনের বাস্তবতা সত্যবচন চোখের সম্মুখে।
লেখক : শিশুসাহিত্যিক গল্পকার নূরনাহার নিপা।
ছড়াগ্রন্থ- নাচছে ফড়িং
লেখক-শফিকুর রহমান সবুজ
ছোটদের সময় প্রকাশন