প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
মাসের প্রথম সপ্তাহ ছিল আমার শৈশবের অন্যতম আনন্দের সময়। মা তখন প্রাইমারি স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা। বেতন তুলতে তাকে নিয়ে যেতাম জামালপুর টাউনে, বসাকপাড়ার জনতা ব্যাংকে। টাকা ছিল অল্প, কিন্তু আমাদের সংসারের জন্য সেটাই ছিল যক্ষের ধন। সেদিনের বিশেষ আনন্দের একটি অংশ ছিল বড় মসজিদ সংলগ্ন হোটেল আলীবাবাতে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া। কখনও আবার বাটা থেকে স্যান্ডেল কিংবা প্রয়োজনমতো নতুন পোশাক কেনা হতো যদিও নতুন পোশাক সাধারণত ছোট ঈদেই মিলত।
এমন এক মাসের প্রথম সপ্তাহে শার্ট কেনার প্রয়োজন হলো। শুনলাম, জামালপুরে নতুন ‘আঁচল’ নামে ফিক্সড প্রাইজের দোকান খুলেছে। মা আমাকে নিয়ে গেলেন সেখানে। দোকানে ঢুকে চোখ ধাঁধিয়ে গেল কিন্তু নিতে হবে মাত্র একটি শার্ট। বহু বাছাইয়ের পর একটি লাল চেকের শার্ট আমার মন কাড়ল প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো সুন্দর। কিন্তু মায়ের সামর্থ্যরে কথা ভেবে দাম কমানোর চেষ্টা করলেন তিনি। দোকানদার রাজি হলেন না। অবশেষে মা আমাকে টেনে দোকান থেকে বের করে আনতে লাগলেন। আমি মায়ের হাত ধরে বের হচ্ছিলাম ঠিকই, কিন্তু চোখ বারবার ফিরে যাচ্ছিল সেই লাল চেকের শার্টের দিকে। মা আমার মনোভাব টের পেলেন। মুহূর্তে আমাকে টেনে আবার দোকানে নিয়ে গেলেন। দোকানদারের দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন- শার্টটা প্যাকেট করেন। সেই মুহূর্তে আমি দেখেছিলাম আমার মা যেন জগতের সবচেয়ে সাহসী ও বিত্তবান নারী, যিনি তার বালক ছেলের শখের শার্টের জন্য পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন।
লেখক : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেন্দুয়া, নেত্রকোনা