প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
অল্প বয়সেই বিধবা হলো ফুলবানু। দেখতে সুন্দর। চাইলে সে আবার বিয়ে করতে পারত কিন্তু করেনি। অনেকে তাকে বলেছিল। তবু সে রাজি হয়নি। একমাত্র ছেলে রাজাকে নিয়েই সে থাকতে চায়। পাড়ার বেপারিও তাকে বলেছে। তাতেও রাজি নয় সে। ছেলেকে ভর্তি করেছে গ্রামের স্কুলে। সে এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বিবর্ণ শার্ট, ছেঁড়া হাফপ্যান্ট, হাওয়াই চটিÑ এ হলো ছেলের অবস্থা। কাঁধে জোড়াতালি ব্যাগ ঝুলিয়ে যখন সে স্কুলে যায়, তখন ফুলবানুর ভাবতে ভালো লাগে তার ছেলে একদিন ডাক্তার হবে। না হোক সরকারি অফিসার, কি স্কুলের মাস্টার। সে আশাতেই জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে ফুলবানু। তবু সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে ছেলের যেন পড়াশোনায় কোনও অসুবিধা না হয়। ছেলের জন্য কি-না করে সে। মহিলা হয়েও পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিশ্রমের কাজ করে। রাজমিস্তিরির জোগাড়, রিকশা চালানো, ভাটায় ইট টানা, ধানের মৌসুমে ধানকাটা, ধান রোয়া ইত্যাদি। আর কিছু না পেলে লোকের বাড়ি বাসন মাজা কাপড় কাচা। তাকে এসব করতে দেখে অনেকেই গায়ে পড়ে সাহায্য করতে চায়। তাদের সাহায্যের আড়ালে কুমতলব ঠিকই বুঝতে পারে ফুলবানু।
ওই তো সেদিন হাবু মোল্লার বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে হাবু মোল্লার মতলব জানতে পারল। আসলে কেউ সাহায্য করতে চায় না। সাহায্যের নামে থাকে আরেক মতলব। এ মোল্লাই এখন আশপাশের কয়েক গ্রামের সবচেয়ে বেশি টাকাওয়ালা মানুষ। ধার চাইতে গেলে কেউ ৫০ টাকাও দেয় না এমনিতে।
ছেলে আগেই বলে রেখেছিল ফুটবল খেলতে যাবে বন্ধুদের সঙ্গে। ১০০ টাকা দিতে হবে। ধার চাইতে গেছিলাম মাব্বরের কাছে। শুনে মাতব্বর সে কী ফুর্তি। লাফ দিয়ে বলে, ১০০ কেন, ৫০০ নিয়ে যা। টাকা দাও টাকা দাও-ঘ্যান ঘ্যান, ঘ্যান ঘ্যান। কত করে বুঝালাম বাপরে আমার কাছে টাকা নেই। কিন্তু সে কি আর বুঝ মানে। শেষে চিৎকার দাঁত খিচুনি কান্নাকাটি পা দাপানি। এরপর দুই ঘা পিঠের ওপর। আর অভিমান করে ছেলের দৌড় ধুলোর রাস্তা ধরে। পেছন পেছন আমি ছুটে এসেছিলাম খানিকটা। ছেলের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে। কিন্তু ছেলে থামে না। ছুটতেই থাকে ধুলোর মেঠো পথ ধরে। দু’পাশে পাকা ধানের সোনালি সম্ভার। সামনে কালচে বন রেখা। বনের ওপারে সারি সারি টিলা ডুংরি পাহাড়। সেদিকেই ছোট হতে হতে মিলিয়ে যায় বাপ মরা অনাথ ছেলেটা।