ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গল্প

আম ও কোকিল

জুয়েল আশরাফ
আম ও কোকিল

এক বনে বাস করত এক কোকিল। সেই বনে আরও অনেক প্রাণীও থাকত। সব সময় কোকিল এই গাছ থেকে ওই গাছে উড়ে যেত, আনন্দে কুহু কুহু গানটি গাইত। বনের সব প্রাণী কোকিলের শব্দ পছন্দ করত। আর সব কোকিল রানির গানের প্রশংসা করত। বসন্তের সময় এসে গেছে। একদিন এভাবে উড়ে বন থেকে বেরিয়ে দূরের শহর ছাড়িয়ে মায়াপুর গ্রামে এলো। সেখানকার গাছগুলোও কুহু কুহু করতে থাকে। একদিন পর বনের সব প্রাণী কোকিলকে খুঁজতে লাগল।

মায়াপুর গ্রামের গ্রামবাসী এ সুরেলা কণ্ঠ পছন্দ করল। তারা আগে কোনোদিন কোকিলের কণ্ঠ শোনেনি। তাই ব্যাপারটি তাদের কাছে অদ্ভুত লাগল। কিন্তু কোকিল মানুষের মধ্যে অভ্যস্ত না। তাই তার মন যেন বনে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো গ্রামবাসী যদি দেখে ফেলে তাহলে! সেজন্যই বারবার প্রতিটি গাছের ডালে লুকিয়ে গান গায়। লালচাঁন নামে এক গ্রামবাসী কোকিলের ওপর নজর রাখল, জাল ফেলে তাকে ধরে ফেলল। কোকিল এ ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে তার মধুর কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেল। কোকিল খুব দুঃখ পেয়ে গেল। গ্রামের সবাই লালচানকে অনেক বকাঝকা করল। তাকে খুব খারাপ বলল। এদিকে বিষয়টি রাজার কাছে পৌঁছায়। রাজা খুব ভালো মানুষ। খুব সংবেদনশীল। তিনি লালচাঁনকে অনেক বকাঝকা করে বললেন, কারও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার সবার আছে। সে মানুষ হোক বা পশু বা পাখি।

লালচাঁন তার ভুল মেনে নিল। কোকিল মিষ্টি কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করল। কখনও কোকিলকে মধু দিল, কখনও মিষ্টি দুধ আবার কখনও আখের রস। কোকিল সব পান করেও তার কণ্ঠ ফিরে পেল না। সারাদিন মন খারাপ থাকে। এরকম দুই মাস কেটে গেছে। গ্রীষ্মকাল এসে গেছে। মিষ্টি আমের মৌসুম চলে এসেছে। রাজা একটি নতুন সমাধানের পরামর্শ দিলেন। লালচাঁনকে সব ধরনের মিষ্টি পাকা আম আনতে বললেন। যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, আশ্বিনা স্বাদযুক্ত আম ও আরও কিছু আম। পুরো গ্রামবাসীও লালচাঁন এবং রাজার কথাকে সমর্থন করল। সবাই নিজ নিজ বাগান থেকে বাছাই করা মিষ্টি আম লালচাঁনকে দিল।

এবার রাজা লালচাঁনকে বললেন, সব আম থেকে মিষ্টি রস বের করে একটি পাত্রে রাখো।

লালচাঁন তাই করল। কোকিলের কাছে রাখল। প্রথম দিকে কোকিল রানির ভালো লাগেনি। কারণ রস ছিল হলুদ রঙের। কোকিল আমের রসের কথা জানত না। পুরো বাটি থেকে কোকিল রানি সারাদিন পালা করে খুব আনন্দে আমের রস পান করতে লাগল। কয়েকদিন কেটে গেল। একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। কোকিলের কণ্ঠ ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে। দুই সপ্তাহ পরে এটি আগের চেয়ে মিষ্টি কণ্ঠে গাইতে শুরু করে।

আমের রসের এ বিস্ময় দেখে গ্রামের সবাই রাজা ও লালচাঁনের ভালো কাজের প্রশংসা করতে লাগল। এরই মধ্যে কোকিল গ্রামবাসীর ভাষা শিখেছে। কোকিল রাজা ও লালচাঁনকে ধন্যবাদ জানাল। গ্রামবাসীকেও ধন্যবাদ জানাল। এখন তার জঙ্গলে যাওয়ার সময় হয়েছে, কারণ তার বন্ধুরা সেখানে। একথা শুনে গ্রামবাসী খুবই দুঃখ পেল। এ বিষয়ে কোকিল বলল, আমি প্রতি বছর বসন্ত ঋতুতে এসে আমের ডালে বসে কুহু কুহু গান করব। ওই মৌসুমে আমের ফুল আসে।

কোকিল বনে গিয়ে আগের মতোই প্রতিটি গাছে গান গাইতে লাগল। তার অভিজ্ঞতা সব প্রাণীকে জানাল। আমের রসের কথাও বলল। প্রায় দশ মাস কেটে গেছে। বনে আম গাছে আমের ফুল এলো। তখন কোকিলের মনে পড়ল তাকে মায়াগ্রামে যেতে হবে।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোকিল মায়া গ্রামে গিয়ে শুধু আম গাছে গান গাইতে লাগল। সবাই খুশি হয়ে কোকিলের কথা শুনল এবং প্রশংসা করল। গ্রীষ্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে কোকিল বনে ফিরে গেল। আবার আগামী বছর আসার প্রতিশ্রুতি দিল।

আম ও কোকিলের মধ্যে অটুট সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর বসন্ত বেলায় মানুষের মাঝে এসে তার সুরেলা গানে আনন্দ দেয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত