ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মসজিদে আকসা যাদের

জাকারিয়া মাহমুদ
মসজিদে আকসা যাদের

আল আকসা এক প্রেমময় নাম। হৃদয়ের ফুলদানিতে সযত্নে সাজিয়ে রাখা সুরভিত পুষ্প। মুসলমানদের সম্মানের প্রতীক। বিজয়ের চিহ্ন। প্রথম কেবলা। যা মসজিদুল আকসা, বাইতুল মুকাদ্দাস অভিধায় অভিহিত। কিন্তু আল আকসা রক্তাক্ত। জায়োনিস্ট ইহুদিদের বিষাক্ত থাবায় নীল। মুসলমানদের রক্ত নদী প্রবাহিত করে তারা তা দখলের নেশায় মত্ত। অর্ধশতাব্দী কাল ধরে তারা বুনে যাচ্ছে হীন চক্রান্তের জাল। সাম্প্রতিককালে আল আকসাকেন্দ্রিক রচিত হয়েছে আরেক মর্মান্তুদ ইতিহাস। মুসলমানদের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সাইক্লোন। তবুও তারা আপোসহীন। ভেসে আসা খড়কুটোর ন্যায় মুষ্টিমেয় কিছু লোক আজাদির লড়াই লড়ছে বীরবিক্রমে। কুপোকাত করছে অভিশপ্ত ইহুদিদের। যা দেখে আজ বিশ্ব অবাক। কুফফার শক্তি হতবাক। শুধু আজ নয়, কালাতিক্রমে এভাবেই মানুষ লড়েছে আকসার জন্য। ঢেলে দিয়েছে বুকের তাজা খুন। ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা। কিন্তু কেন এত রক্তারক্তি! খুনের দাস্তান! আল আকসা কাদের? মুসলমানরা কি অনধিকার চর্চা করছে! ইতিহাস বলে আসল কথা।

আল আকসা কার : আল আকসার মিহরাব-মিম্বর নবীদের হাতেই ছিল। সকল নবী তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুসংবাদ দিয়েছেন। সুতরাং তাওহিদে বিশ্বাসী এবং শেষ নবীর অনুসারী একমাত্র তারাই এ মসজিদের অধিকার রাখে। আর যারা তাওরাতকে বিকৃত করেছে, মুসা (আ.)-এর শরিয়তকে বিকৃত করেছে, যারা ঈসা (আ.)-কে হত্যা করতে চেয়েছে, তারা কখনোই হকদার হতে পারে না। ইহুদিরা যখন খোদাদ্রোহী হয়ে যায় এবং অসংখ্য নবীকে হত্যা করে, যা বাইবেলের পুরোনো নিয়মে আজও বিদ্যমান, তখন আল্লাহতায়ালা বুখতে নসরের মাধ্যমে তাদের সাম্রাজ্য ধূলিস্যাৎ করে দেন। এরপর বহু শতাব্দী গত হয়েছে। এর মধ্যে কখনোই তাদের হাতে আর আকসা পুনর্র্নিমাণ বা সংস্কার হয়নি। সুতরাং তাদের আল আকসার অধিকার দাবি করা রেড ইন্ডিয়ানদের আমেরিকার মালিকানা দাবি করার নামান্তর।

ইহুদিদের দাবি : দাউদ ও সোলাইমান (আ.) আকসা নির্মাণ করেছেন। আমরা সোলাইমান (আ.)-এর নির্মাণের স্বীকৃতি আগেই দিয়েছি। দাউদ ও সোলাইমান (আ.) তো আমাদেরও নবী। এখানে ইহুদিদের দাবি তোলার কোনো অধিকার নেই। কারণ, যেটাকে তারা তাওরাত বলে (পুরোনো নিয়ম), সেখানে এ কথা আছে, সোলাইমান (আ.) জীবনের শেষ মুহূর্তে কাফের হয়ে গিয়েছিলেন। মূর্তি পূজা করতেন। (বাইবেল ১ বাজাবলি ১১-৪১১০)। যা আল্লাহতায়ালা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘সোলাইমান কোনো কুফুরি করেনি; অবশ্য শয়তান মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরিতে লিপ্ত করেছিল।’ (সুরা বাকারা : ১০২)।

মালিকানার দাবি চরম মিথ্যা : প্রাচীন ব্রোঞ্জযুগে কেনানিরা এসে ফিলিস্তিনে বসবাস শুরু করে। এ জাতির প্রতিটি শাখা আরব বংশোদ্ভূত। জাজিরাতুল আরব থেকে তারা ফিলিস্তিনে অভিবাসন গ্রহণ করে। যা অকাট্য সত্যরূপে ইতিহাসের পাতায় আজও বিদ্যমান। স্বয়ং তাদের হাতে বিকৃত তাওরাতও এ কথা স্বীকার করে। সুতরাং ফিলিস্তিনের প্রথম বাসিন্দা হওয়া এবং আকসার প্রথম মালিকানার দাবি চরম মিথ্যা এবং প্রত্যাখ্যাত। সোলাইমান (আ.) কর্তৃক আল আকসা পুনর্র্নিমাণের পর যখন তা আবার বিরান হয়ে যায় এবং আবার পুনর্র্নিমাণের প্রয়োজন দেখা দেয়, কালপরিক্রমায় কখনও ইহুদিরা তা নির্মাণ করেনি। সুতরাং আল আকসা তাদের, এ দাবি কখনোই কোনোভাবেই যুক্তিসম্মত নয়; বরং আল আকসা মুসলমানদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত