
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলার মধ্যে দেশটির সঙ্গে ইউরোপের উত্তেজনা বাড়ছে। সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও ডেনমার্কে রুশ ড্রোনের উপস্থিতির পর পাল্টাপাল্টি হুমকি বাড়ছে। রাশিয়া আতঙ্কে পোল্যান্ডের আকাশসীমা সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাল্টিক সাগরে বেড়েছে ন্যাটোর উপস্থিতি। এরই মধ্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেগেই ল্যাভরভ পশ্চিমা বিশ্বকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আগ্রাসন চালানো হলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার মধ্যরাতের পরের এ হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অন্তত ২৭ জন। কিয়েভ ছাড়াও জাপোরিঝিয়া ও অন্যান্য শহরে রাতভর হামলা চালিয়েছে মস্কো। জাপোরিঝিয়ায়ও ১৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। আহতদের মধ্যে তিন শিশুও রয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ এ হামলায় শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া।
রাশিয়ার এ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া কেবল ইউক্রেনেই থেমে থাকবে না। এ কারণেই ন্যাটো জোটভুক্ত ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা যাচাই করছে রাশিয়া। ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না পুতিন। আরও কয়েকটি ফ্রন্ট তিনি চালু করবেন।
পশ্চিম ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা হওয়ার পর রোববার ভোরে যুদ্ধবিমান উড়িয়ে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পোলিশ সশস্ত্র বাহিনী। তারা বলছে, এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ১০ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ন্যাটো ও পোলিশ বিমান তিনটি রুশ ড্রোন ধ্বংস করার পর থেকে এমন পদক্ষেপ নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ডেনমার্কেরও অভিযোগ, তাদের বিমানবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ড্রোন উড়িয়েছে রাশিয়া। যদিও এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেনি মস্কো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ এনেছে এস্তোনিয়াও। এ ধরনের অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তকে শক্তিশালী করতে একটি বিশেষ অভিযান চালু করেছে ন্যাটো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিজেদের আকাশসীমায় রুশ বিমান ভূপাতিত করা উচিত। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন এবং প্রথমবারের মতো বলছেন, মস্কোর কাছ থেকে ইউক্রেনের সব জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এদিকে শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য ইইউ বা ন্যাটো সদস্য দেশে আক্রমণ নয়। তবে মস্কোর দিকে যে কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
রাশিয়া আতঙ্কে পোল্যান্ডের আকাশসীমা সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাল্টিক সাগরে বেড়েছে ন্যাটোর উপস্থিতি। জানা যায়, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার নতুন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে পোল্যান্ড। রাজধানী ওয়ারশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় লুবলিন ও রেজশোভ শহরের আকাশসীমা রোববার বন্ধ রাখা হয়। দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, অপ্রত্যাশিত সামরিক কার্যক্রম মোকাবিলায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ন্যাটো বাল্টিক সাগরে তাদের মিশন জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। ডেনমার্ক ও নরওয়েতে সামরিক স্থাপনার কাছে একের পর এক রহস্যজনক ড্রোন দেখা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ন্যাটোর একটি আকাশ প্রতিরক্ষা যুদ্ধজাহাজসহ গোয়েন্দা, নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম মোতায়েন করা হচ্ছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলার কারণে রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৩টার দিকে পুরো দেশে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়।
জার্মানির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট জানিয়েছেন, ডেনমার্ক সীমান্তবর্তী শ্লেসভিগ-হলস্টাইনে ড্রোনের ঝাঁক উড়তে দেখা গেছে। তিনি আইন সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে ড্রোন ভূপাতিত করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে প্রায় ১০টি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা যৌথভাবে সীমান্ত সুরক্ষায় ড্রোন ওয়াল গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব পদক্ষেপ ইউরোপে সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পশ্চিমা বিশ্বকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আগ্রাসন চালানো হলে তার জবাব কঠোরভাবে দেওয়া হবে। শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, জার্মানি যুদ্ধের ভঙ্গিমায় কথাবার্তা বলছে।