ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব ই প রি চি তি

আমার জীবনকথা

আমার জীবনকথা

লেখক : মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধী

অনুবাদ : মুহাম্মদ আমিন কাসেমী

সম্পাদক : হাবিবুল্লাহ সিরাজ

প্রচ্ছদ : আবুল ফাতাহ মুন্না

প্রকাশক : ইলহাম

পৃষ্ঠা : ১৬০

দাম : ৩০০ টাকা

ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের সংগ্রাম ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়। এ সংগ্রামের অন্যতম সূতিকাগার ছিল দারুল উলুম দেওবন্দ। এখানকার আলেমরা যেমন নৈতিক ও দার্শনিকভাবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনি তারা সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। তারা একদিকে ছিলেন গভীরভাবে ধর্মনিষ্ঠ, অন্যদিকে তীব্রভাবে বিপ্লবী। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তারা জীবনবাজি রেখে লড়েছেন। কেউ শহিদ হয়েছেন, কেউ নির্বাসিত হয়েছেন, কেউ দেশান্তরে গিয়েছেন। এ ধারার এক উজ্জ্বল নাম মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধী (রহ.)।

যিনি উপমহাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও চিন্তাজগতে ইসলামি পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার বিপ্লবী চিন্তা ও নির্ভীক কর্মজীবন আজও মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অবিনশ্বর প্রেরণার বাতিঘর। তার লেখা আত্মজীবনী ‘আমার জীবনকথা’ সেই বিপ্লবী জীবনযাত্রার অকপট দলিল। যেখানে দেখা যায়, কীভাবে এক চিন্তাশীল আলেম উপনিবেশবাদ, শোষণ ও অজ্ঞতার অন্ধকার ভেদ করে ইসলামি সভ্যতার পুনর্গঠনের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এটি শুধু ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা নয়; এক মহত্তর আদর্শিক যাত্রার ইতিহাস। আফগানিস্তান, হেজাজ, রাশিয়া, তুরস্ক, মক্কা-মদিনা থেকে দিল্লি পর্যন্ত তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পাঠককে নিয়ে যায় এক চিন্তার বিপ্লবের পথে। এতে রয়েছে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবির চিন্তার বিকাশ, ইসলামি রাষ্ট্রনীতি ও সমাজব্যবস্থার বাস্তব রূপরেখা এবং উপনিবেশমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন। সর্বপ্রথম ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে ‘মওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর রোজনামচা’। এরপর ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বের হয় ‘মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর ডায়েরি’। ২০১৯ সালে দীপাকর প্রকাশনী প্রকাশ করে ‘মওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর আত্মজীবনী’।

২০২৩ সালে ইত্তেহাদ প্রকাশনী থেকে আবার প্রকাশ পায় ‘মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর ডায়েরি’ বই। তবু মাওলানা সিন্ধীর চিন্তা ও সংগ্রামের পূর্ণতা পাঠকের কাছে পৌঁছায়নি। এ সংস্করণ সেই অপূর্ণতাকে পূরণ করার এক নতুন প্রচেষ্টা। ১৯৩৩ সালে তিনি তার ‘কাবুলে আমার সাত বছর’ নামে কাবুল সফরের বিস্তারিত বিবরণ লিখেন। আর স্বাধীনতার আগমুহূর্তে ১৯৩৮ সালে নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখেন ‘মেরি জিন্দেগি’ বা ‘আমার জীবনকথা’ নামে। এ দুটি রচনা মিলিয়েই বর্তমান অনুবাদ ‘আমার জীবনকথা’ তৈরি হয়েছে। ধারাবাহিক আত্মজীবনীর শেষে যুক্ত করা হয়েছে ‘কাবুলে আমার সাত বছর’। বইটিতে সংযোজিত হয়েছে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরিশিষ্ট- দেশে ফেরার পরবর্তী ঘটনা, ব্রিটিশ সরকারের ঐতিহাসিক রওলাট কমিটির রিপোর্ট, মাওলানা সিন্ধীর কিছু বিতর্ক নিয়ে শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানির বিশ্লেষণ এবং মাওলানা সিন্ধী ও কমিউনিজম বিষয়ক মাওলানা জাহিদ আর-রাশাদির প্রবন্ধ। এ ছাড়া বইটিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ টীকাণ্ডটিপ্পনী; যেখানে আলোচিত হয়েছে তার ব্যক্তিত্ব গঠনের পেছনের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, খানকা, প্রিয় কিতাব, রাশিয়া সফর এবং ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় পাঠ।

অনুবাদক সহজ-সরল ও সাবলীল ভাষায় মূল আত্মজীবনীর গভীর ভাবার্থ তুলে ধরেছেন। অনুবাদে মূল লেখার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভাষার রূপ এবং ভাবের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখে পাঠকের জন্য তৈরি হয়েছে এক আকর্ষণীয় ও চিন্তাশীল পাঠ্য। একই সঙ্গে টীকা ও পরিশিষ্টের মাধ্যমে মাওলানা সিন্ধীকে ঘিরে নানা বিতর্ক ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শাহ ওয়ালিউল্লাহর চিন্তাধারাকে গতিশীল করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ইসলামি চিন্তা, রাজনীতি, ইতিহাস ও সমাজব্যবস্থার নবজাগরণে আগ্রহী পাঠকের জন্য বইটি কেবল আত্মজীবনী নয়, বরং যুগান্তকারী চিন্তার ইতিহাস। গবেষক, ছাত্র, নীতিনির্ধারক ও চিন্তাশীল পাঠকের জন্য এটি অনিবার্য পাঠ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত