ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হালদায় পশুর চামড়া-বর্জ্যে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

হালদায় পশুর চামড়া-বর্জ্যে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর প্রতিটি শাখা খাল এবং নদীর বিভিন্ন অংশে ভাসছে কোরবানির পশুর চামড়া। আবার কোথাও কোথাও দেখা মিলছে পশুর নাড়িভুঁড়ি। দূষিত হয়ে হালদার পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে কুচকুচে কালো পানিতে রূপান্তর হয়েছে। রাউজান, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার শাখা খাল হয়ে হালদায় পড়েছে এসব কোরবানি পশুর চামড়া ও পশুর নাড়িভুঁড়িসহ বর্জ্য।

এছাড়া বিলে ও ছড়ায় ফেলা বর্জ্যও পানিতে ভেসে শাখা খাল হয়ে পড়েছে নদীতে। এতে হালদা নদীর মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) মৎস্য অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর ব্যয়ে হালদা নদী এবং নদীর ১৭টি শাখা খালের দূষণ প্রতিরোধে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। একই সঙ্গে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের ব্যয়ে নদীতে মাইকিং করা হয়। এর পরও ঠেকানো যায়নি কোরবানি পশুর বর্জ্য দ্বারা নদী দূষণ।

হালদার ডিম সংগ্রহকারী রৌশনজ্ঞীর বলেন, হালদা আমাদের সম্পদ, আমরা যারা এই নদীর ডিম আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করি, তারা কেউ নদীতে পশুর বর্জ্য ফেলবে না। শাখা খালগুলো হয়ে কোরবানির পশুর চামড়া ও নাড়িভুঁড়ি নদীতে আসছে। হালদার পানি বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। এদিকে ফটিকছড়িতে হালদার শাখা খালে কোরবানি পশুর চামড়া ফেলে হালদা নদী দূষণের দায়ে সম্প্রতি ফটিকছড়ি থানায় ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী ও চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নদী পরিব্রাজক চট্টগ্রাম মোহনা থেকে প্রায় ৫৫টির অধিক কোরবানির পশুর নাড়িভুঁড়ি অপসারণ করেছে। এছাড়া রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার গঠিত টিমও নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানি পশুর চামড়া ও নাড়িভুঁড়ি অপসারণ করে মাটিচাপা দিয়েছে।

হালদা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীর প্রায় ১৯টি শাখা খাল দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়াসহ নাড়িভুঁড়ি প্রবেশ করে পানি দূষিত হয়ে কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। এতে অক্সিজেন হ্রাস এবং অ্যামোনিয়া প্রডিউস হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে মাছ ও জীব-বৈচিত্র্যের। গবেষকদের মতে এই দূষণকে বলা হয় ইউট্রোফিকেশন, যা নদীর ইকো সিস্টেমের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গতকাল বুধবার পর্যন্ত নদীতে বড় মাছ বা গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। এর আগে গত সোমবার নদীর উপরাংশে ছোট মাছ মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি এই বিশেষজ্ঞের রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা মাইকিং করে সচেতনতামূলক প্রচার করেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এরপরও নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পশুর চামড়া ও পশুর নাড়িভুঁড়ি ভাসতে দেখা গেছে। আমাদের একটি টিম নদীতে নামিয়ে পশুর চামড়া ও নাড়িভুঁড়ি তুলে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত