ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মহসীন কলেজের খেলার মাঠ আধুনিকায়ন করতে প্রকল্প গ্রহণ

মহসীন কলেজের খেলার মাঠ আধুনিকায়ন করতে প্রকল্প গ্রহণ

বন্দর নগরীর খ্যাতনামা কলেজসমূহের মধ্যে মহসিন কলেজ অন্যতম। এর পাশেই অবস্থিত কলেজের মাঠ। যে মাঠে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য তরুণ, যুবক কিশোরদের রঙ্গিন সব স্মৃতি। যা তাদের স্মৃতির পাতায় রবে চিরকাল। এই মহসীন কলেজের মাঠের দৃশ্য পাল্টে যাচ্ছে শীঘ্রই। এটি আরও সুসজ্জিত করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬৭ টাকায় সংস্কার করা হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রাচীনতম এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠটি। প্রকল্পের আওতায় মাঠের উন্নয়নের পাশাপাশি একটি গ্যালারি নির্মাণ করা হবে। মাঠের চতুর্থপাশে থাকবে হাঁটার পথও। মাঠের সীমানা দেয়াল হবে ‘গ্যাভিয়ন ওয়াল’এর। সংস্কার শেষে মাঠটি উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঠের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পটি শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে। এদিকে কলেজের শিক্ষার্থীরা মাঠের উন্নয়ন করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি তাদের জন্য আনন্দের বলেও মন্তব্য করেন। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ১৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ৩০ মে পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্টের আওতায় ‘ডেভেলপমেন্ট অব হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ফিল্ড ফর রিভাইটেলেজেশন অব আর্বান স্পেস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহসীন কলেজের মাঠের উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্ব ব্যাংক। গত ১০ সেপ্টেম্বর ‘ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাঠের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় যা করা হবে : প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় মোট ৪ হাজার ৩১১ বর্গমিটার বা ১ দশমিক ০৬৫ একর জায়গা উন্নয়ন করা হবে। মাঠে দর্শনার্থীদের জন্য একটি গ্যালারি নির্মাণ করা হবে। গ্যালারির সাথে সাথে পুরুষ, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা থাকবে। শারীরিক চর্চা ও বিনোদনের জন্য মাঠে উন্নত মানের ব্যায়াম সরঞ্জাম রাখা হবে। ২৩১ মিটার দীর্ঘ ও ২ দশমিক ৪ মি. প্রশস্ত বাইসাইকেল লেইন করা হবে।

এছাড়া ২৩০ মিটার দীর্ঘ ২ দশমিক ৪ মিটার প্রশস্ত ওয়াকওয়ে করা হবে চারপাশে। রাতেও যাতে মাঠে খেলাধুলা করা যায় সেজন্য আধুনিক লাইটিং সিস্টেম ও ফ্লাড লাইট স্থাপন করা হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে স্থাপন করা হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। পানি দেয়ার জন্য থাকবে আধুনিক স্প্রিংকলার সিস্টেম। এছাড়া মাঠকে সর্বদা ব্যবহার উপযোগী রাখতে নির্মাণ করা হবে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এদিকে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, অবকাঠামো পরিবর্তনে গৃহীত কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে। গ্যালারি নির্মাণ কাজ চলছে। গ্যালারি নির্মাণ কাজের মূল ভিত্তির কাজ শেষ হয়েছে। চলছে গ্যাভিয়ন ওয়ালের কাজও। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের শিক্ষার্থী পুলক বলেন, মহসীন কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এ মাঠে খেলতে আসে। মাঠের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত।

মাঠের উন্নয়নে সিটি মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। মাঠের উন্নয়ন কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে থাইল্যান্ডে অবস্থানরত সিটি মেয়র ও মহসীন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, শপথ নেওয়ার পরেই আমি বলেছিলাম আমাদের যুব ও তরুণ সমাজকে খেলাধূলার মাধ্যমে কীভাবে সঠিকপথে ধাবিত করতে পারি। একসময় চট্টগ্রামে মাঠ ছিল, খেলাধূলা জনপ্রিয় ছিল। যুবক ও তরুণদের খেলার প্রতি মোটামুটি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে। যার কারণে তারা মাদকাসক্তসহ খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে। সেই সোসাইটিকে আগের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য ৪১ ওয়ার্ডে আমি ৪১টি খেলার মাঠ করে দিব বলেছিলাম। আর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার যেসব মাঠ আছে সেগুলো সংস্কার করে দিব। সেই প্রেক্ষিতে সাড়ে চার কোটি টাকায় মহসীন কলেজের মাঠে কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। মেয়র বলেন, মহসীন কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটা নগরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মাঠের আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্রীড়া ও শারীরিক চর্চায় সুযোগ পাবেন। আমাদের লক্ষ্য নগরের তরুণদের সুস্থ বিনোদন, খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমে যুক্ত করা। এ বিষয়ে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা জানান, প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ১৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে। তিনি বলেন, গ্যালারির ফাউন্ডেশন শেষ হয়েছে। গ্যাবিয়ন ওয়ালের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত