দূষণ দখল ও ভরাটের ফলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খাল ও ছড়াগুলো। এসব জলাধারের বেশির ভাগই অবৈধভাবে দখল ও ভরাটের ফলে পানি নিষ্কাশন কাজ খুবই দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিবছরের মতো চলতি বর্ষা মৌসুমেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষক ও সাধারণ মানুষ। গত বছর ভয়াবহ বন্যায় মিরসরাইয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকের শত শত একর জমির ফসল, ঘরবাড়ি, মৎস্য প্রকল্প, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৬২ কোটি টাকা। তাই দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের নাপিত্তা ছড়া দিয়ে বর্ষা মৌসুমে নিচিন্তা, দুয়ারু, নয়দুয়ার, পোলমোগরা, মসজিদিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার পানি প্রবাহিত হয়। এছাড়া ওই ছড়া দিয়ে পাহাড় থেকে সারা বছর পানি নেমে আসে। ওই পানি শুষ্ক মৌসুমে চাষিরা শাক সবজিসহ ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করে। কিন্তু ওই ছড়া বর্তমানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা শেষ হতেই ছড়াতে চাষাবাদে উপযোগী পানি থাকে না।
ওই এলাকার কৃষকরা জানান, ছড়া সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ছড়াটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢলের পানি ছড়ার পাড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে এবং ঢলের পানি খালে পড়তে অনেক সময় লাগে। ফলে দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়। মিরসরাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ছড়ার নাম মহামায়া। মহামায়া ছড়ার পানির শুষ্ক মৌসুমে কৃষকের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয় মহামায়া সেচ প্রকল্প। কিন্তু ওই প্রকল্পের সুফল অল্প সংখ্যক কিছু কৃষক ভোগ করতে পারলেও বেশির ভাগ কৃষক মহামায়ার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সকারণ হিসেবে জাফরাবাদ, বাঘখোলা, নয়াপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার কৃষকরা জানান, মহামায়া ছড়ায় আগের কোনো রূপ নেই। ছড়ার কোথাও ভরাট হয়ে গেছে আবার কোথাও ছড়া দখল করে বাড়িঘর তৈরি করার ফলে ছড়া সরু হয়ে গেছে। ফলে সেচ প্রকল্পের পানি ছড়া দিয়ে বেশি দূরে আসে না। তাই কৃষকও ছড়ার সুফল পায় না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে মিরসরাই সদর ইউনিয়ন ও মিরসরাই পৌরসভার পানি এছড়া দিয়ে নিষ্কাশন হয়। কিন্তু ছড়ার দূর্দশার কারণে বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ডুবে যায়। বর্ষার সময় মিরসরাই পৌরসভা ও খইয়াছড়া ইউনিয়নের উত্তর অঞ্চলে পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফেনামুনি খাল। কিন্তু খালটির বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির সময় আমবাড়িয়া, ফেনামুনি, গোভনীয়া এলাকার বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। এছাড়াও মঘাদিয়া খাল, ডোমখালী-খাজুরিয়া খাল, সোনাইছড়ি খাল, কমরআলী খাল, বামনসুন্দর-ইছাখালী খাল গোভনীয়া খালসহ উপজেলার ছোট বড় অর্ধ শতাধিক খাল সংস্কার না করার ফলে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এসব ছড়া খালের দ্রুত সংস্কার না করা হলে উপজেলার জলাবদ্ধতা কখনও কমবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।