ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাটহাজারীতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মাটির ঘর

হাটহাজারীতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মাটির ঘর

চাটগাঁইয়া ভাষায় মাইট্যা ঘর নামে পরিচিত। যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে জমিদারের এসি ঘর নামে পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর। আগে প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো মাটির বাড়ি। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এসব বাড়ি এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রামবাংলা থেকে মাটির তৈরি ঘর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘর প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে এ বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তবানরা বা জমিরদারদের এক সময় অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দ্বিতল মজবুত ঘর তৈরি করতেন যা এখনও কিছু কিছু গ্রামে চোখে পড়ে। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল বা ব্যাট তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপড় খড় বা টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘস্থায়ীত্বের কারণে গ্রামের মানুষ ইট-সিমেন্টের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন।

উপজেলার উত্তর জনপথের বাসিন্দা সুনীল দে ও জামাল উদ্দীন জানান, আমাদের বয়স বর্তমানে ৬৫-৭০ বছর। আমাদের এলাকায় আগেরকার দিনে দ্বিতল বিশিষ্ট মাটির ঘর মানে জমিদার, যাদের একতলা বিশিষ্ট ছিল তারা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের। বাপ-দাদার এক ‘শ বছর আগে তৈরি করেছিল মাটির ঘর, যেটায় তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তবে বছর খানেক পূর্বে মাটির ঘরের পাশে পাঁকা ভবন করছি। ছেলেরা বিদেশে ও ভালো চাকরি করায় তারা এখন মাটির ঘরে থাকতে অপরাগতা প্রকাশ করায় ছেলেদের বিয়ে করার পর সবাই এখন পাকা ভবনে বসবাস করছি। তিনি দুঃখ করে বলেন, মানুষের দৃষ্টিতে মাটির ঘর এখন যুগের সঙ্গে যায় না। অনেকে দারিদ্র্যের কারণে ভেঙে ফেলতে পারছেন না। সুনীল দে ও জামাল উদ্দীন আরও বলেন, সুযোগ থাকলে মাটির ঘর না ভেঙে সবাই মাটির ঘর রাখত, আমিও রাখতাম। পাশের বাড়িতে যখন দালান ওঠে, তখন আমাদের দিকে তাদের নজর পড়ে এ জন্য যে মাটির ঘরের কারণে তাদের দালানকোঠার শোভাবর্ধন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে মাটির বাড়ি বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় অধিকাংশ মানুষ মাটির বাড়ি ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে অনেক লোকের নিবাসকল্পে গ্রামের মানুষরা ইটের বাড়ি-ঘর তৈরি করছেন বলে অনেকের ধারণা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত