
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন রিং রোড প্রকল্প সম্পন্ন হলে কমে আসবে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে শহরের দূরত্ব। আগে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল থেকে নগরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে যেতে সময় লাগত এক ঘণ্টা পর্যন্ত। এখন সেই পথ পেরোতে লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট। এ প্রকল্প একদিকে নগরবাসী যেমন নতুন বিনোদন কেন্দ্রের নতুন অভিজ্ঞতা দেবে অন্যদিকে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে নির্মিত ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার রিং রোড চালু হলে এ সুবিধা মিলবে নগরবাসীর। শুধু দ্রুত যাতায়াতই নয়, নদী তীরের মনোরম দৃশ্যের কারণে এটি এরইমধ্যে শহরের নতুন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়ন করছে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পটি।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকায়। ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৪ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ এই সড়ক একই সঙ্গে শহররক্ষা বাঁধ হিসেবেও কাজ করবে। রাস্তার উচ্চতা রাখা হচ্ছে গড়ে ৪ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে মোট ৬৯ দশমিক ৫০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১২টি রেগুলেটর ও পাম্প হাউস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যার মধ্যে ১০টি রেগুলেটর ও ১০টি পাম্প এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকায় সিসি ব্লক বসিয়ে স্লোপ প্রটেকশন কার্যক্রম চলছে। গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তাটির পাথর বসানোর কাজ প্রায় শেষ। বিকালে নদী তীরে হাঁটতে আসছে শত শত মানুষ। অনেকেই বলছেন, কর্ণফুলীর হাওয়া আর দৃশ্য কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের মতোই অনুভূতি দেয়।
চান্দগাঁও থেকে স্ত্রীসহ ঘুরতে আসা আসাদুজ্জামান খান কানন জানান, কালুরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত এই সড়ক খালি যান চলাচলের জন্য নয়। এখানে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে নদীর পাশে সময় কাটানোই আলাদা আনন্দ। বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকার গৃহবধূ ফারজানা আক্তার জানান, চট্টগ্রামে পর্যটন স্পটের অভাব ছিল। এখন এই রিং রোডে এসে মনে হয় শহরের ভেতরেই একটা ছোট কক্সবাজার।’ প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, এটি শুধু একটি সড়ক নয়, একটি বহুমুখী প্রকল্প। এর মাধ্যমে শহরকে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা, দক্ষিণাঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন এবং নতুন পর্যটন সম্ভাবনা- সবই একসঙ্গে এগিয়ে আসছে। চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে- রিং রোড পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও নিউমার্কেট এলাকায় বাণিজ্যিক যাতায়াত কয়েকগুণ দ্রুত হবে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলে নতুন আবাসন, রেস্টুরেন্ট ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠবে, যা শহরের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।