ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

লোহাগাড়ায় বিদ্যালয়ের ভাঙাচোরা ভবনে পাঠদান

বিদ্যালয়টি খুবই জরাজীর্ণ
লোহাগাড়ায় বিদ্যালয়ের ভাঙাচোরা ভবনে পাঠদান

লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগরের হরিণা এলাকায় অবস্থিত হাজী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা কক্ষে চলছে পাঠদান। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়াবুল হক বিগত ২০০৮ সালে তার বাবা হাজী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর নামকরণে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এবং ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পাঁচ জন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৫টি কক্ষ। ছাত্রীদের জন্য নেই আলাদা কমন রুম। চারপাশের বেড়ায় বড় বড় ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় সূর্যের আলোক রশ্মি বেড়া ভেদ করে শিক্ষার্থীদের শরীরে পড়ছে। এতে তীব্র গরম সহ্য করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া ছাউনির টিনেও বড় বড় ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম ভোগান্তি হয় শিক্ষকদের। তাছাড়া কখন ছাউনির টিনের কাঠ ভেঙে মাথায় পড়ে সে ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় একটি টিনের সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেটিও পরিপাটি নয়। জরাজীর্ণ এ বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলে। এতে শ্রেণিকক্ষের অভাবে ১টি কক্ষে ২ শ্রেণির ক্লাসও করাতে হয় শিক্ষকদের।

৯ম শ্রেণির ছাত্রী সাজমিন আকতার বলেন, গরমের মধ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঢোকা রোদ এবং বর্ষাকালে ছাউনির টিনের ছিদ্র দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে ভিজে অনেক কষ্টে ক্লাস করতে হয়। তাই নিরাপদে ক্লাস করতে সরকারিভাবে একটি নতুন ভবনের জন্য এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এসফাকুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। বিগত দিনে এ বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত কোনো ধরনের উন্নয়ন হয়নি। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি এবং গরমের সময় বেড়ার ছিদ্র দিয়ে আসা সূর্যের আলোক রশ্মির তাপ সহ্য করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হয়।

ফলে বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম অনেক সময় ব্যাহত হয়। এলাকার বাসিন্দা ও এনসিপির লোহাগাড়া উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী জহির উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টি খুব বেশি অবহেলিত। এ বিদ্যালয়ে অতীতে কোনো ধরনের উন্নয়ন হয়নি। তাই বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য খোরশেদ আলম ভুট্টু বলেন, এ বিদ্যালয় এলাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে বার বার কথা বলেছি। একটি নতুন ভবনের জন্য অনেকবার ঢাকায়ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়েছি। কিন্তু এ পর্যন্ত শুধু আশ্বাস পাচ্ছি কিন্তু কখন কাজ শুরু হবে সেটা আল্লায় ভালো জানে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কান্তি ধর জানান, ঝুঁকিপূূর্ণ ও জরাজীর্ণ কক্ষে রোদণ্ডবৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হয়। বিগত কয়েকমাস আগে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি টিনের সেমি পাকা ভবন হয়েছে। কিন্তু সেখানেও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে একই কক্ষে ২য় শ্রেণির ক্লাস করাতে হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টিতে ৩০০ এর অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস করাতে হয়। উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ পেলে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান আরও অনেক ভালো হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল এহেছান বলেন, বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের জন্য ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন ভবন অনুমোদন হলে টেন্ডারের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি খুবই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত