ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট

হঠাৎ করে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত ৯ জন নার্স-মিডওয়াইফকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে প্রতিভূ ব্যতীত এ আদেশে অন্তর্বিভাগের (ইনডোর) স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়া আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে পৃথক কয়েকটি পত্রে এ বদলি এবং সংযুক্তির অফিস আদেশ দিয়েছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ মঞ্জু আখতার। এর বিপরীতে মাত্র একজন নার্সকে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। এ আদেশের ফলে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তর্বিভাগে (ইনডোর) স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রসূতি সেবা ও অপারেশন থিয়েটারের সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৯টি ও মিডওয়াইফ (ধাত্রী) পদ রয়েছে ১০টি। এ পদে কর্মরত রয়েছেন নার্স ২৪ জন ও মিডওয়াইফ ৪ জন। এর মধ্যে ৫ জনকে বদলি ও ৪ জনকে সংযুক্তি করে আদেশ দেওয়া হয়ছে। ২ জন কোর্সে ও ১ মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন। জানা গেছে, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে শিশু, মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড রয়েছে। প্রায় সময় নির্ধারিত বেডের চেয়ে অধিক রোগী ভর্তি হন। নরমাল ডেলিভারি, সিজারিয়ান ডেলিভারি, নাক-কান-গলা ও অর্থোপেডিক্স সার্জারি হয়ে থাকে নিয়মিত। নার্স ও মিডওয়াইফ সংকটের কারণে এসব সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ৩৯টি নার্স ও মিডওয়াইফ পদের বিপরীতে ২৮ জন নিয়োজিত ছিলেন। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে তিনটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকাল, বিকাল ও রাত এই তিন পালায় স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হতো। তিনজনের কাজ একজনকে করতে হয়। তার ওপর প্রতিভূ ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত অবিবেচনাবশত। কেননা রোগীদের ওষুধ-পথ্য খাওয়ানো, স্যালাইন এবং ইনজেকশন দেওয়া, ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা (ড্রেসিং) ও সেবা-শুশ্রƒষা সবকিছুই নির্ভর করে তাদের ওপর। হাসপাতালে তিন পালায় কাজ হয়।

এখন নার্সের সংখ্যা আরও অপ্রতুল হলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হবেন। হঠাৎ উপজেলা থেকে গণহারে নার্স ও মিডওয়াইফদের সরিয়ে নেওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো চিকিৎসাসেবায় স্থবিরতা নেমে আসবে বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি বলেন, ‘৫০ জন রোগীর জায়গায় হাসপাতালে ৮০-১০০ জন ভর্তি থাকে।

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী থাকলেও নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। এর মধ্যে বদলি ও সংযুক্তির ফলে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগীয় সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে। এমনিতে রোগীদের রাত-দিন সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগের তুলনায় ৪-৫ গুণ ডেলিভারি, মাইনর, মেজর সার্জারি চলমান রয়েছে জানিয়ে ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি বলেন,’ হঠাৎ এ বদলি আদেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকুরীতে বদলি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। কিন্তু নার্সদের গণহারে যে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়া হয়নি। নার্সরা অনলাইনে বদলির আবেদন করেছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় না করে এভাবে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের বদলি ও সংযুক্তি আদেশ করা অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। জনস্বার্থে নার্স প্রতিভূ ছাড়া ছাড়পত্র দিলে হাসপাতালের সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত