ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে যানজট নিরসনে মনোরেল চালুর প্রস্তাব

চট্টগ্রামে যানজট নিরসনে মনোরেল চালুর প্রস্তাব

বন্দর নগরীতে প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে নগরীর দৃশ্যপট। মূলত, যানজট নিরসন ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চারটি রুটে মনোরেল চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সম্প্রতি নগরীর রেস্টহাউস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সভায় জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে চারটি রুটে মনোরেল চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখানবাজার, দেওয়ানহাট, পতেঙ্গা হয়ে) ২৬.৫ কিলোমিটার। সিটি গেট থেকে শহিদ বশিরুজ্জামান চত্বর (একে খান, নিমতলী, সদরঘাট, ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে) ১৩.৫ কিলোমিটার। অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি হয়ে) ১৪.৫ কিলোমিটার। সিটি গেট থেকে পোর্ট কানেক্টিং রোড হয়ে নিমতলা পর্যন্ত ১০.৯ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওরাসকম কনস্ট্রাকশন, যারা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (চচচ) মডেলে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে ২০-২৫ বছর প্রকল্পটি নিজস্বভাবে পরিচালনা করার পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে। প্রকল্পের প্রতিনিধিরা জানান, মনোরেল চালু করতে প্রতিদিন ৩০৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে এবং কেন্দ্রীয় স্টেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধার জন্য প্রায় ৫০ একর জমি লাগবে। প্রতিটি যাত্রীর টিকিটে সিটি কর্পোরেশনকে ৫ টাকা করে মুনাফা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সভায় আরও জানানো হয়, সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ৭-৮ মাস, আর নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রয়োজন হবে ৩-৪ বছর। সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের জনসংখ্যা, যানবাহনের চাপ ও কর্মঘণ্টার ক্ষতি বিবেচনায় গণপরিবহনে আধুনিক সমাধান অত্যন্ত জরুরি। মনোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সময়, জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয় হবে, শহরও হবে আরও গতিশীল।

তিনি আরও বলেন, মনোরেল শুধু যানজটের সমাধান নয়, এটি নগরীর ভবিষ্যৎ উন্নয়নের মাইলফলক হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট ও পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সিটি কর্পোরেশন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। সভায় উপস্থিত ছিলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, মনোরেল প্রকল্পের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফয়সাল রহমান, ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরসের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাউসার আহমেদ চৌধুরী, প্রকল্প পরামর্শক কামরান আনোয়ার নাগিভ এবং চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প সমন্বয়ক আবু সাদাত মো. তৈয়ব। সভায় অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম নগরীতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে যা নগরবাসীর দীর্ঘদিনের যানজটের দুর্ভোগ কমিয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত