কোরআনুল করিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদায় সমুন্নত করবেন।’ (সূরা মুজাদালা, ১১)।
নবীজি আত্মপরিচয় দিয়ে বলেন : ‘আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে শিক্ষক হিসাবে।’ -সুনানে দারেমী
‘আমাকে আল্লাহ নিজের ব্যাপারে ও অপরের ব্যাপারে কঠোর করে পাঠাননি। বরং তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সহজতর শিক্ষক হিসাবে।’-মুসলিম
আলেমের গুরুত্ব ও মর্যাদা : ‘শুনে রাখো, ইলম চলে যাওয়ার অর্থ- তার বাহকগণ চলে যাওয়া।’ -মুসনাদে আহমাদ।
‘যে ব্যক্তি আমাদের বড়দের সম্মান এবং আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না আর আমাদের আলেমগণের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে জানে না, সে আমার উম্মাত নয়।’ -মুসনাদে আহমাদ
‘তোমাদের মাঝে ওই ব্যক্তি উত্তম যিনি কোরআন নিজে শিখেন এবং অন্যকে শিক্ষা দেন।’ -বায়হাকী
‘মানুষকে ভালো শিক্ষা দানকারি শিক্ষকের মাগফিরাতের জন্য সৃষ্টির সবকিছুই দোয়া করে, এমনকি সমুদ্রে থাকা মাছেরা।’ -তাবারানী ‘যার কাছ থেকে তোমরা এলেম শিখেছ, তাকে সবিনীত সম্মান কর।’ -তাবারানী
হযরত আলী (রা) বলেন- ‘আমি তার গোলাম, যিনি আমাকে একটি হরফও শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি চাইলে আমাকে বিক্রি করতে পারেন, অথবা মুক্ত করতে পারেন, আবার চাইলে দাস বানিয়েও রাখতে পারেন।’ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) (মৃত্যু ৬৮ হিজরি) বলেন- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বিখ্যাত সাহাবি যায়েদ ইবনু সাবিত (রা.)-এর ঘোড়ার পাদানি ধরলে যায়েদ (রা.) বললেন, হে রাসুলের চাচাতো ভাই এমনটি করবেন না আপনি। ইবনু আব্বাস (রা.) বললেন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ওলামাগণের সঙ্গে এমন আচরণ করতেই আদেশ করেছেন। অতঃপর যায়েদ (রা.) ইবনু আব্বাস (রা.)-এর হাত ধরলেন এবং চুমু দিলেন। ইবনু আব্বাস (রা.) বললেন এমনটি করবেন না আপনি। যায়েদ (রা.) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পরিবার-এর সঙ্গে যুক্তদের সঙ্গে এমন আচরণ করতেই আদেশ করেছেন আমাদের।’
‘আমি আমার উস্তাদ হাম্মাদ (র.) -এর সম্মানের জন্য তার বাড়ির দিকে পা ছড়িয়ে দেইনি কখনও।’
ইমাম আবু ইউসুফ (র.) (১১৩-১৮৩ হিজরি) বলেন-
’আমি আমার পিতামাতার সাথেই ইমাম আবু হানিফা (র.) -এর জন্য দোয়া করি। আমি ইমাম আবু হানিফা (র.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আমার পিতামাতার সঙ্গেই আমার ওস্তাজ হাম্মাদ (র.) -এর জন্য দোয়া করি আমি।’
‘যে ছাত্র শিক্ষকের হক আদায়ে অমনোযোগী, সে কখনোই সফলকাম হবে না।’
ইমাম শাফেয়ী (র.) (১৫০ -২০৪ হিজরি) বলেন : ’আমি যখন ইমাম মালেক (র.)-এর সামনে কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টাতাম, তখন অনেক বিনয়ের সঙ্গে উল্টাতাম, খেয়াল রাখতাম যেন তিনি শব্দ পেয়ে কোনোভাবে বিরক্ত না হন।’
’আমি আমার ওস্তাজ মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান থেকে এক উটের বোঝা পরিমাণ এলেম গ্রহণ করেছি।’
ইমাম আহমদ (র.) (১৬৪ -২৪১ হিজরি) বলেন : আমি ৩০ বছর যাবত রাতে ঘুমানোর আগে আমার ওস্তাজ ইমাম শাফেয়ী (র.) এর জন্য দোয়া করি এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।’
ইমাম নববী (র.) (৬৩১-৬৭৬ হিজরি) বলেন : ‘এলেম শিক্ষার শায়েখগণ হলেন শিক্ষার্থীর দ্বীনী পিতা। তিনি হলেন বান্দা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মাঝে সম্পর্কের সংযোগ স্থাপনকারী পক্ষ।’
প্রজ্ঞাপূর্ণ আরবি প্রবাদ : ‘যে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছেছে, সে শিক্ষকের সম্মান রক্ষার কারণেই পৌঁছেছে। আর যে ব্যর্থ হয়েছে, সে শিক্ষকের সম্মান রক্ষা না করার কারণেই ব্যর্থ হয়েছে।’
আরবি কবিতার ভাষ্য : শিক্ষক এবং ডাক্তার উভয়ই সম্মান না পেলে তারা সঠিক উপদেশ দেন না। তাই আপনি যদি ডাক্তারকে অপমানিত করেন তবে রোগ নিয়ে সবর করুন (রোগ ভালো হওয়ার আশা নেই)। আর যদি শিক্ষকের সাথে রূঢ়, অভদ্রজনোচিত আচরণ করেন তবে অজ্ঞতা নিয়ে সবর করুন (অজ্ঞতার মধ্যেই থাকতে হবে)।’
উস্তাদগণ হৃদয়পটে অমলিন : তাদের দেহ উপস্থিত নাই, তবে তাদের এলেমের স্মৃতি অন্তরে বহাল রয়েছে আজও।’ -হযরত আলী রা. (মৃত্যু ৪০ হিজরি)
আরবি কবির ঐতিহাসিক উক্তি : আমার চোখ তাদেরকে খুঁজে বেড়ায় অথচ তারা রয়েছেন আমার চোখের মণিকোঠায়।’ আমার অন্তর তাদের প্রতি আগ্রহী ভীষণ, অথচ তারা রয়েছেন আমার পাঁজরের মাঝেই।’ -কবি মুতানব্বী (৩০৩-৩৫৪ হিজরি)।