ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কোরবানি নিয়ে যা না জানলেই নয়

মুফতি আবুল কাসেম
কোরবানি নিয়ে যা না জানলেই নয়

কোরবানির মৌসুম ঘনিয়ে এসেছে। এ সময় সামর্থ্যবানরা কোরবানির প্রস্তুতি নেন। তবে কোরবানির আগে প্রথমে নিয়ত ও উদ্দেশ্য যাচাই করতে হবে, বিশুদ্ধ করতে হবে। লৌকিকতা বা গোশত খাওয়ার নিয়ত থাকলে কোরবানি কবুল হবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এসব পশুর রক্ত, গোশত আল্লাহর কাছে কিছুই পৌঁছে না, বরং তোমাদের পক্ষ থেকে তাকওয়াই তার কাছে পৌঁছে’ (সুরা হজ : ৩৭)।

শুধু কোরবানি নয়, যেকোনো আমলের ফলাফলনির্ভর করে নিয়তের ওপর। নিয়ত বিশুদ্ধ না হলে আমল কবুল হয় না। হাদিসে পরিষ্কার ভাষায় বিবৃত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। সুতরাং যে দুনিয়া লাভের জন্য অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে সে তা পেয়ে যাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে পাওয়ার জন্য হিজরত করবে সে-ও তাদের পেয়ে যাবে।’ (বোখারি : ৩৮৯৮)।

মানুষের সবকিছু হতে হবে শুধু রবের সন্তুষ্টির জন্য। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ- সবই সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’ (সুরা আনআম : ১৬২)। কোরবানি ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একেকটি নেকি দেওয়া হবে। জায়েদ বিন আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, এ কোরবানি কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটি তোমাদের আদি পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। তারা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে। তারা আবারও প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ভেড়ার পশমের কী বিধান? তিনি বললেন, ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩১২৭)।

সামর্থ্যবান কোনো মানুষের কোরবানি থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। আল্লাহ সবার সৃষ্টিকর্তা। মানুষ ও পশু দুটিই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর হুকুমে, আল্লাহর নামে মানুষ পশু কোরবানি করবে- এতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের সার্থকতা।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিনে আল্লাহর কাছে মানুষের সব নেক আমলের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় কোরবানি করা। কেয়ামতের ময়দানে জবেহকৃত জন্তু তার শিং, পশম, খুরসহ এসে হাজীর হবে। নিশ্চয়ই কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা খুশি মনে আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।’ (ইবনে মাজাহ : ৩১২৬)। কোরবানি করলে অতীতের সগিরা (ছোট) গুনাহ মাফ হয়।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতেমা (রা.)-কে বলেন, তুমি তোমার কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থানে উপস্থিত থাকো। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তোমার অতীতের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন। ফাতেমা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, এই গুনাহ ক্ষমা হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য নির্ধারিত, নাকি সব মুসলমানের জন্য? নবীজি (সা.) বললেন, আমাদের ও সব মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম : ৭৫২৪)।

কোরবানি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত