
বর্ষা মৌসুমেও কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বিলাঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি হলেও জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এখানকার অনেক লোক পুকুরে মাছ চাষ না করেও তারা হাওর থেকে মাছ আহরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন করছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, তাড়াইল উপজেলায় মাছের উৎপাদনের পরিমাণ ৭ হাজার ৫২০ মে. টন, উদ্ধৃত ৪ হাজার ২০ মে. টন। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে পুকুর রয়েছে ২ হাজার ৯৫৫টি, জলাশয়ের পরিমাণ ৩৬টি। সূতী, নরসুন্দা, বর্নি ও ফুলেশ্বরী নামে ৪টি নদী রয়েছে, সুনাই ও ভুলিয়ারদাইড় নামে ২টি হাওড় রয়েছে। উপজেলায় মৎস্যচাষি রয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ জন এবং মৎস্যজীবি রয়েছে ৫ হাজার ৭৫ জন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানকার মিঠা পানির মাছ এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু দিন দিন দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে আসায় এখন স্থানীয় চাহিদা মেটানোই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। যদিও পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, মাছের অভয়াশ্রম ধ্বংস, শুকনো মৌসুমে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি সেচে মাছ ধরার অবাধ প্রবণতা, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ নিধন এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগে না থাকায় এ উপজেলার মৎস্য সম্পদ দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এ কারণে মৎস্যজীবি ও আড়তদারদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। মাছশূন্য হওয়ায় অধিকাংশ জেলে পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। জেলেদের টাকা দাদন দিয়ে লোকসানের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় আড়তদাররা। তাড়াইল সদর মাছ বাজারে মাছ ক্রয় করতে আসা সহিলাটী গ্রামের কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর-ডোবায় নানা প্রজাতির প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমে খাল-বিল ও পুকুরে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশি মাছের দেখা নেই।
তাই দেশি মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার হাট-বাজারগুলো।
তাড়াইল উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) অমিত পণ্ডিত দেশীয় মাছ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরা এবং প্রজনন মৌসুমে মা মাছসহ রেণু পোনা নিধণ করার কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। আমরা মৎস্য বিভাগ মৎস্য আইন বাস্তবায়নে যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি।