ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সিরাজদিখানে বেহাল সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ

সিরাজদিখানে বেহাল সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে কুমারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। এলাকাবাসী এ রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন রাস্তার সংস্কার হলে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বয়রাগাদী ইউনিয়নের শাহজালালের বাড়ি থেকে মুনতুজ আলীর বাড়ি পর্যন্ত সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত ও কাদাজল জমে আছে। কোথাও কোথাও ইট-বালির চিহ্ন নেই বললেই চলে। পথচারীরা খালি পায়ে কিংবা জুতা হাতে নিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছেন। স্থানীয় এক বৃদ্ধকে হেঁটে যেতে দেখা গেছে, যিনি হাঁটতে গিয়ে কয়েকবার পিছলে পড়ে যাচ্ছিলেন। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের প্যান্ট-কাপড় কাঁদা জলে ভিজে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডিসি প্রজেক্ট থেকে শুরু করে সাহাজুল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় ইটের সলিং বসানো হলেও শাহজালালের বাড়ি থেকে মুনতুজ আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মিটার রাস্তা জুড়ে খানা-খন্দ আর কাদা-পানিতে চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন চলাফেরা করতে হয় সাধারণ মানুষ, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের। এ অবস্থায় রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ কোনো যানবাহন ঠিকভাবে চলতে পারে না। এমনকি অনেক সময় পথচারীরা পড়ে গিয়ে আহত হন। কুমারখালী গ্রামের সামেদ আলী বলেন, আমাদের এই রাস্তাটা বহু বছর ধরে সংস্কারের অপেক্ষায় আছে। বর্ষাকালে কাদা-পানিতে হাঁটাও যায় না। সবচেয়ে কষ্ট হয় স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের। তারা জুতা হাতে নিয়ে কাদা পার হয়ে স্কুলে যায়। এই দুর্দশা বারবার বলেছি, কিন্তু কেউ কান দেয় না।

নুর ইসলাম বলেন, শাহজালালের বাড়ি থেকে মুনতুজ আলীর বাড়ি পর্যন্ত পুরোটা রাস্তা যেন খানা-খন্দের খনি। একেক জায়গায় এমন গর্ত যে, গাড়ি উল্টে যায়। বর্ষায় তো এসব জায়গা একেবারে অচল হয়ে পড়ে।

খাতেজা বিবি বলেন, আমি প্রতিদিন বাজারে যাই। এই রাস্তায় কাদা-মাটিতে চলা যায় না। একবার আমার অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে এমন ভোগান্তি হয়েছিল যে কল্পনাও করতে পারবেন না। আমরা এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাই। শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, কুমারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০০-র বেশি শিক্ষার্থী আছে। তাদের প্রতিদিন এই খারাপ রাস্তা দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় তারা পড়ে গিয়ে আহত হয়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে চারপাশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে মশার উপদ্রব বাড়ছে। কুমারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ জনের বেশি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম জানান, রাস্তার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বর্ষাকালে স্কুলে আসতেই পারে না। পড়াশোনায় স্থবিরতা দেখা দেয়। এমনকি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বারবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও দীর্ঘদিনেও রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের জোর দাবি জানিয়েছেন।বয়রাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাবিবুর রহমান সোহাগ বলেন, আমার ইউনিয়নে কুমারখালী গ্রামের এই রাস্তাটি ছাড়া আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এভাবে খারাপ নেই। আমি অনেকদিন ধরে উপজেলা মাসিক সভা ও সমন্বয় সভায় বিষয়টি তুলেছি, স্থানীয় সাংবাদিকরাও সে বিষয়টি জানতেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখন রাস্তাটি পাকা বা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। মাঝে মাঝে যেখানে বেশি ভাঙে, সেখানে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে সংস্কারের চেষ্টা করেছি।

তবে মূলত এই রাস্তাটি এলজিইডির আওতায় পড়ে, আগে এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। সরকার পরিবর্তনের কারণে প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের নতুন উপজেলা প্রকৌশলী যোগ দিয়েছেন। তার সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি সহকারী প্রকৌশলীসহ একটি টিম পাঠিয়ে রাস্তাটি পরিদর্শন করিয়েছেন। আশা করছি দ্রুতই সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হবে। রাস্তাটি সংস্কার করা হলে স্বস্তি পাবে এই ইউনিয়নের মানুষ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত