ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১৫ বছর ধরে বন্ধ ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলস

পুনরায় চালুর দাবি
১৫ বছর ধরে বন্ধ ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলস

লোকসানের মুখে ২০১১ সালে বন্ধ ঘোষণার পর থেকে ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলসটি অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। দীর্ঘ ২১ একর জায়গার জুড়ে বিস্তৃত এ কারখানা দেখভালের জন্য নেই পর্যাপ্ত জনবল। এক সময়ে মিলটি সহস্রাধিক ব্যক্তির কর্মের ঠিকানা হলেও বছরের পর বছর শুনশান নিরবতায় এটি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। ১৫ বছর বন্ধ থাকা মিলটি চালু করা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হওয়ার পাশাপাশি ফেনীর অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় বেকার সমস্যার সমাধান ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে ১৯৬৫ সালে ফেনী সদর উপজেলার রানীর হাট সংলগ্ন স্থানে ব্যক্তি প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা হয় দোস্ত টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। ২১ দশমিক ৪৭ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ কারখানায় ৬ শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় গড়ে ওঠে হাট-বাজার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ অনেক কিছুই। ১৯৭২ সালে এটি রাজস্ব করা হয়। পরে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল। এখান থেকে উৎপাদিত সুতা দেশ-বিদেশে রপ্তানি হতো। চাহিদার আলোকে আধুনিকায়ন করতে না পারায় ১৯৯৩ সাল থেকে কারখানাটিতে লোকসান শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে উৎপাদন করেও লাভের মুখ না দেখায় ২০১১ সালে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় কারখানাটি। সেই থেকে বছরের পর বছর এটি চালুর প্রহর গুনতে গুনতে অনেক শ্রমিক মৃত্যু পথের যাত্রী হয়েছেন। আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার জন্য অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলায় এক সময়ের সবচেয়ে প্রাণ চাঞ্চল্যের কারখানাটিতে একেবারেই শুনশান নিরবতা নেমে এসেছে। বড় বড় দালান ঘর থাকলেও সেগুলোতে নেই কোন সরঞ্জাম। বছরের পর বছর বন্ধ থাকায় গুদাম ও মেশিনঘরগুলো ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আশপাশের আবাসিক ঘরগুলো দীর্ঘদিন মেরামত না করায় আয়ুস্কাল পুরিয়ে ভেঙে ভেঙে পড়ছে। নিম্ন আয়ের কিছু পরিবার ও পুরাতন কিছু শ্রমিকের পরিবার-স্বজনরা নামমাত্র ভাড়ায় এসব ঘরে বসবাস করলেও বৃহদায়তনের এ কারখানায় দেড় দশকে কখনও জনচাঞ্চল্যের দেখা মেলেনি।   

কারখানার ব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন জানান, এটি বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প কর্পোরেশনের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হলেও উৎপাদন বন্ধ থাকায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বে নেই। অন্য অফিসের পাশাপাশি আমাকে এবং হিসাব সহকারীকে দোস্ত টেক্সটাইল মিলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনের আলোকে মাসে ২/৪ দিন এখানে অফিস করি। এর বাইরে বৃহৎ এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাহারায় ১ জন হাবিলদার ও ৯ জন নিরাপত্তা প্রহরী দায়িত্ব পালন করে থাকেন।  

তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কারখানাটির যাবতীয় মেশিনারীজ স্ক্রেপ হিসেবে দরপত্রের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কারখানার ভূমি এক শিল্প মালিককে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৬ সাল থেকে ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকার ভূমি কর বকেয়া পড়ে আছে। বর্তমানে ৪৫ জন ভাড়াটিয়া ও কয়েকটি পরিবহন পার্কিং ভাড়া থেকে কিছু টাকা আয় হয়। ওই আয় থেকে এখানকার খরচের কিছু অংশ নির্বাহ হয়।

মিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হুমায়ুন কবির বলেন, এক সময় এই মিলের আওয়াজ শুনে মানুষ নামাজ পড়তো, সময় বুঝতো, ইফতার ও সেহরী খেতো। কারখানা শুরু ও শেষ হওয়ার সময়ে লোকারণ্য হয়ে উঠতো পুরো এলাকা। কিন্তু এখন আমরা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ নেই।

মনজুর হোসেন নামের এক তরুণ জানান, এক সময়ে আমার বাবা এ কারখানায় চাকরি করতো। ওই সময়ে এ কারখানায় শত শত মানুষ কাজ করতো। ফেনীর হাজার মানুষের কাজের ঠিকানা ছিল এ মিলটি। মিলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার পর আর চালু হয়নি। এটি চালু হলে আশপাশের মানুষের কর্মসংস্থান হতো। অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখা যেতো। আমরা এখনো কারখানার ভেতরে একটি জরাজীর্ণ বাসায় থাকি। আমরা মনে করি, যদি সরকারি-বেসরকারিভাবে কারখানাটি চালু হয়, আমাদের কাজের ব্যবস্থা হবে। 

ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্টার লাইন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন বলেন, দোস্ত টেক্সটাইল মিলটি সারা বাংলাদেশের একটি কর্মসংস্থান ছিল। এটি সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলে চেম্বার অব কমার্স সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মিলটি জরুরি ভিত্তিতে চালু করার দাবি জানাচ্ছি। ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেন, আমরা এটিকে সচল করতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এটি সচল করা গেলে ফেনীর অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আশপাশের এলাকায় অর্থনৈতিক প্রবাহ বাড়বে। এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত