ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ

রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ

চট্টগ্রামে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্যাস সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটি, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে প্রথম ইউনিটের আয়ুষ্কাল শেষ করেছে। প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানির বেঁধে দেওয়া ৩০ বছরের মেয়াদকাল ২০২২ সালে শেষ হয়। কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন কয়েক বছর ধরে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে থাকা এই ইউনিটটি এখন পিডিবির জন্য একটি শ্বেতহস্তী। তবে নষ্ট যন্ত্রপাতির স্থলে নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজন ও গ্যাসের প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে এই কেন্দ্র থেকেও উৎপাদন চলমান রাখা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

জানা যায় কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট গ্যাস পাওয়া সাপেক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত রাখা আছে। এই ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গিয়েছিল ১৯৯৭ সালে। কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া ইউনিট সম্পর্কে বলেন, রিকমিশনিং করে মেয়াদ কাল বাড়ানো সুযোগ রয়েছে।

নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ নতুন করে সংযোজন ও গ্যাস পাওয়া গেলে দুটি ইউনিট থেকে উৎপাদন সম্ভব। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পড়ে থাকা এক নম্বার ইউনিটের নষ্ট যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে নতুন যন্ত্রাংশ সংগ্রহের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ করা হচ্ছে নির্মাতা কোম্পানিসহ যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন গ্যাস সরবরাহ পেয়ে দীর্ঘ তিন বছর সময় বন্ধ থাকা দ্বিতীয় ইউনিটটি গত ৩ আগস্ট চালু করে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। উৎপাদন ক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়াতে গিয়ে গত ৬ আগস্ট ব্যাটারি রুমে আগুন লেগে ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। এখনও গ্যাস পেলে ১৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ১৯৯০ সালে রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। সম্পূর্ণ গ্যাস নির্ভর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটে ২১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার রয়েছে। জানা যায় বাংলাদেশ সরকারের (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) সঙ্গে চীনের একটি চুক্তির আওতায় ৩৩ বছর আগে প্রথম ইউনিটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা পায় দ্বিতীয় ইউনিট। কেন্দ্রের নির্মাণকারী ঠিকাদার ছিল চীনের জাতীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইমপোর্ট-এক্সর্পোট কর্পোরেশন। বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ১৯৯৩ সালে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করলে বাণিজ্যিকভাবে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে পিডিবি উৎপাদনের যায়। জানা যায় চুক্তির শর্তানুসারে শুরু থেকে কয়েক বছর এটির রক্ষাণাবেক্ষণ ও পরিচালনার গুরু দায়িত্ব ছিল চীনা প্রকৌশলীদের উপর। প্রথম থেকে কেন্দ্রে নিয়েজিত ছিলেন ২২ চীনা প্রকৌশলী। তারা কেন্দ্রের অভ্যন্তরে থাকতেন আবাসিক ব্যবস্থায় উচ্চ বেতনে। কেন্দ্রের দায়িত্বশীল সূত্র মতে চীনা প্রকৌশলীরা দায়িত্ব পালনকালীন সময় কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা পিডিবির প্রকৌশলীদের তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো কাজে রাখতেন না। চীনাদের অনুমতি ছাড়া কোনো কাজে হাত দেওয়াও সম্ভব ছিল না। ছোটখাট ক্রুটি বিচ্যুতি ঘটলেও দেশের প্রকৌশলীরা চীনা প্রকৌশলীদের স্মরণাপন্ন হতে হতো।

জানাযায় প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর চুক্তির মেয়াদ শেষে চীনারা ছেড়ে চলে গেলে পিডিবি প্রকৌশলীরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। সেই থেকে তারা সফলভাবে এখন কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। যদিও কেন্দ্রের ওভারহোলিং কাজসহ বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে এখনও ডেকে আনতে হয় চীনা প্রকৌশলীদের। জানা যায়, করোনাকালে এ রকম ত্রুটি জনিত কারণে কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেলে, সেই ত্রুটি সারাতে চীনাদের ডাকা হয়েছিল। সেই সময় করোনার অজুহাতে তারা আসেনি। এরপর থেকে পড়ে ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় আছে বিদ্যুৎ উৎপাদক ইউনিটটি।

খবর নিয়ে জানা যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকারীরা এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কেন্দ্রে স্বংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখে যায়নি। যার কারণে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ম্যানুয়েল পদ্ধতি ব্যবহার করে আগুন নিভানোর চেষ্টা করতে হয়। খবর নিয়ে জানা যায় চীনারা চলে যাওয়ার পর থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট কেন্দ্রের ব্যাটারি রুমে আগুন লাগে। ওই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে কর্তৃপক্ষকে বাইরের ফায়ার সার্ভিস ডেকে আনতে হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে ওই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল দুই নম্বর ইউনিটের উৎপাদন চলাকালে। তখন উৎপাদন ১৮০ থেকে দুই শত মেগাওয়াটে উঠাতে গিয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে থাকা আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বলেছেন নানা সংকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার কারণে কেন্দ্রের ভিতর থেকে লোহালক্কড় জাতীয় নানা জিনিজপত্র চুরি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ কেন্দ্রের ভিতরে দায়িত্বপালনকারী কতিপয় লোকজনের সঙ্গে চোর চক্রের যোগাযোগ থাকায় ভিতর থেকে মালামাল পাচার করার সুযোগ পাচ্ছে।

স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বলেন, গত প্রায় ছয় মাস আগে কিছু ক্যাবেল চুরি করে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় কেন্দ্রের আনসার সদস্যরা চোর ধরে পুলিশের হাতে দিয়েছে। আরও আগেও এ ধরনের একটি চুরির ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত