
পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার কৃষি নির্ভর ৪টি ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষের জীবন কাটছে পানির সঙ্গে। চলতি বছরে টানা ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান দুই আয়ের উৎস কৃষি জমি ও মাছের ঘের। আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়াতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষির সঙ্গে জড়িত সকলেই। এ অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি মাছের ঘেরগুলো তলিয়ে যাওয়াতে ঘের মালিকদের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই পেশার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, মাছের খাদ্য উৎপাদনকারীরাও।
সরেজমিন দেখা যায় উপজেলার চার ইউনিয়ন চলিশিয়া, সুন্দলী ও পায়রা, প্রেমবাগের অধিকাংশ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যতদূরে চোখে পড়ে দেখা যায় শুধু পানি। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াতে এখন এলাকার মানুষের প্রধান বাহন নৌকা বা ডুঙা। চলিশিয়া ইউনিয়ন এলাকায় যেয়ে দেখা যায় বসত বাড়ি তলিয়ে যাওয়াতে উচু রাস্তার উপর বাশ, টিন বা ত্রিপল দিয়ে তৈরি অস্থায়ী আবাসস্থলে এক সঙ্গে বাস করছে মানুষ ও পশু। চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের গৌরাঙ্গ সিংহ বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য আমাদের অনেকের মাছের ঘের পুরো তলিয়ে যাওয়াতে ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে।
এলাকার প্রায় সব বাড়িতে কোমর সমান পানি। অনেকেই স্ত্রী, সন্তান ও পশুদের নিয়ে উচু রাস্তায় ছাপড়া দিয়ে সেখানে বাস করছে।
উপজেলার সড়াডাঙা গ্রামের বাসিন্দা জয়গোপাল বলেন, অনেক বছর ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই আমাদের কৃষি জমি সঙ্গে বাড়ি ও তলিয়ে যায়। দুর্গাপুর গ্রামের সুভাস মন্ডল বলেন, জমিজমা তলিয়ে যাওয়াতে কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন। কেউ ভ্যান চালাচ্ছেন, আবার কেউ খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। এখনও পর্যন্ত আমাদের এলাকার কোনো দরিদ্র মানুষ কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পায়নি। তবে আমাদের জন্য সহায়তার থেকেও পানি নিস্কাশনের ব্যাবস্থা করা বেশি জরুরি।
সুন্দলী এস টি স্কুলের সাবেক শিক্ষক জগন্নাথ রায় বলেন, এই অঞ্চলের পানি বের হয় মুলত দুইটি পথ দিয়ে। সেই পথ টেকা নদী পলি পড়ে এখন প্রায় ভরাট আর আমডাঙা খালের মুখ বন্ধ হয়ে পানি বের হতে পারছে না। আবার যশোর সদর ও ঝিকরগাছা উপজেলার পানি শ্রী নদী ও টেকা নদী দিয়ে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করছে ফলে বৃষ্টির পানি ছাড়াও সেই পানি এসে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ হচ্ছে।
অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি প্রাথমিক ও ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ তলিয়ে যাওয়াতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, উপজেলার ৬২৩৫ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। যারমধ্যে ১৪০৬ হেক্টর ধান ও ৭০ হেক্টর সবজির জমি রয়েছে, এর ফলে কৃষকরা ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আসন্ন মৌসুমে জমি চাষের উপযোগী হলে তাদের ধান ও সবজির বীজ দেওয়াসহ সব প্রকার সরকারি প্রানদোনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।