ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নওগাঁয় ৩৬০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে পাট

নওগাঁয় ৩৬০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে পাট

চাষাবাদ আর আঁশ ছাড়ানোর পর সোনালি আঁশ পাট এখন নওগাঁর হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। পাটের সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে অন্তত ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো গেলে আগামীতে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাশাপাশি কৃষকরাও ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন।

জেলার মান্দা উপজেলা সতিহাট গতকাল মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটবার ছিল।

জেলার মধ্যে মৌসুমে বৃহৎ একটি পাটের হাট নামে পরিচিত। ভোরের আলো ফোটার পর কৃষকরা এ হাটে ভ্যান, বাইসাইকেল ও ভটভটিতে বোঝাই করে পাট বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সকাল ৮টার মধ্যেই পাট বেঁচাকেনা শেষ। এ হাটে প্রকারভেদে পাট বিক্রি হয়েছে ৩৫০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকা মণ। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় এদিন পাটের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এতে মণপ্রতি অন্তত ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দাম কমে আসায় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট বলে দায়ী করা হচ্ছে।

দেশের প্রধান অর্থকরি ফসল পাট। যাকে সোনালি আঁশ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে পরিশ্রমের তুলনায় গত কয়েক বছর থেকে পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কৃষকরা। ফলে পাটের সে সোনালি ঐতিহ্য তা হারাতে বসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর কমেছে পাটের আবাদ। তবে শ্রমিক সংকট ও আঁশ ছাড়ানোর বিড়ম্বনা এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ায় পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অনেকে। এতে গত ৫ বছরের ব্যবধানে পাটের আবাদ কমেছে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর। জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে- জেলায় এ বছর ১৫০ হেক্টর আবাদ কমে ৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৬৮৫ টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘাতে পাট চাষাবাদে হালচাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, পানি সেচ, নিড়ানি, জাগ দেয়া ও শ্রমিকসহ ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ পড়ে প্রায় ১১ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। যেখানে বিঘা প্রতি ফলন হয় ৭-১০ মণ। গত বছর ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ পাট বিক্রি হয়েছিল। পাট চাষাবাদে বাড়তি খরচ, শ্রমিক সংকট ও ঝামেলা হওয়ায় আবাদ কমিয়ে ভুট্টাসহ অন্য আবাদ করা হচ্ছে।

উপজেলার বাঙ্গালপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে পাট বিক্রি করেছি ৩৭০০ টাকা মণ। আরেক সপ্তাহ পর বিক্রি করলাম ৩৬০০ টাকা মণ। এভাবে পাটের দাম কমে গেলে কৃষকদের লোকসান গুণতে হবে। কারণ পাটের খরচ ও পরিশ্রম বেশি। মহাদেবপুর থেকে আসা হাবিবুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি। এ কারণে কিছুটা পাট নষ্ট হয়েছে। ফলে বিঘাতে ফলন পেয়েছি ৮ মণ। তবে দাম ভালো পেয়েছি ৩৭০০ টাকা মণ। যা গত বছর মৌসুমের শুরুতে ৩২০০-৩৪০০০ টাকা মণ ছিল।

পাট ব্যবসায়ি শামিম আহমেদ বলেন, পাট হালকা ভেজা থাকায় দাম কিছুটা কম। এছাড়া মোকামেও দাম কমে যাওয়ায় কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩৮০০-৩৯০০ টাকা মণ কেনা হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দাম ভালো আছে। হাটে যে পরিমাণ পাটের সরবরাহ হয়েছে টাকার অঙ্কে প্রায় ৪৫ লাখ। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খলিলুর রহমান বলেন, পাট আমাদের প্রধান অর্থকরী ফসল। পানি স্বল্পতায় পাট জাগ দেওয়ার অসুবিধাসহ নানা কারণে আবাদ কমে যাচ্ছে। এবছর ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে এবং কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছে। বিশেষ করে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট জাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো গেলে পাটের আবাদ বাড়বে। এতে করে পরিবেশ দূষণমুক্ত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবে। তবে পাটের ন্যায্য দাম ও আঁশ ছাড়ানো আধুনিক কৌশল এবং সুবিধা বাড়ানো গেলে আগামীতে চাষাবাদ বাড়বে এবং পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত