
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া গ্রাম। ওই গ্রামের প্রত্যন্ত জনপদের একটি পরিবার ‘দত্ত পরিবার’। দত্ত পরিবারের সাধক পুরুষ রসিক চন্দ্র। তার সহধর্মিণী মুক্তকেশী দেবী দত্ত।
তখন ব্রিটিশ শাসিত উপমহাদেশ। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা এ বাংলা বিদেশি শাসকদের অত্যাচারে জর্জরিত। এমন এক দুঃসময়ে মুক্তকেশী দেবী জন্ম দেন এগারো পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের। তার এগারো পুত্রের সবাই উচ্চশিক্ষিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এগারো পুত্র তাদের কীর্তির জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন রত্নরূপে। মুক্তকেশীর ১১ সন্তানের খ্যাতি ছিল একাদশ রত্ন হিসেবে। তাই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সফল জননী মুক্তকেশী দত্তকে ’রত্নগর্ভা’ উপাধি দিয়েছিলেন।
কিন্তু রত্নগর্ভা মুক্তকেশীর চার কন্যা মনোরমা দত্ত, চিন্ময় দত্ত, স্নেহলতা দত্ত ও সরোজ দত্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেননি।
তাদের সময়ে এই গ্রামীণ জনপদে নারী শিক্ষা ছিল সোনার হরিণ। তাই মুক্তকেশীর মনে ছিল নীরব বেদনা। নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন বুকে লালন করতে থাকেন তিনি। একসময় তার সন্তানরা রত্নগর্ভা মুক্তকেশীর স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেন। মায়ের ইচ্ছার সম্মান জানিয়ে গ্রামে পিছিয়ে থাকা নারী শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে নিজেদের বসতভিটের পাশে সর্বপ্রথম নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯২৮ সালে মুক্তকেশীর বড় ছেলে রেবতী রমণ দত্ত মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুক্তকেশী বালিকা বিদ্যালয়’। রেবতী রমণ দত্ত ছিলেন সে সময় ব্রিটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
সময়ের বিবর্তনে রত্নগর্ভা ও একাদশ রত্নের কথা নতুন প্রজন্ম ভুলে যেতে বসলেও তাদের প্রতিষ্ঠিত মুক্তকেশী বালিকা বিদ্যালয়টি আজ শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে। এখনও নারীশিক্ষার উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া গ্রামে তথা সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
এছাড়া রত্নগর্ভা মুক্তকেশীর ১১ সন্তান জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর গ্রামে অশিক্ষার অন্ধকার দূর করতে গড়ে তোলেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রেবতী রমণ দত্ত ভ্রাতৃদের প্রতিষ্ঠিত কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ (১৯৩৯), তাদের অন্য এক ভাই উপমহাদশের প্রখ্যাত গণিতবিদ ড. বিভূতিভূষণ দত্তের নামে প্রতিষ্ঠা করেন- একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪)। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ অঞ্চলের মানুষদের স্মরণ করিয়ে দেয় দত্ত পরিবারের অবদান।