
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় প্রবাহমান মুহুরী নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিন দশক আগের ১১৭ মিটার দৈর্ঘ্য এ ব্রিজটি সংস্কার না করায় জং ধরে মরিচা পড়ে গেছে। পাটাতন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, নাটবল্টু খুলে যাচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচলে ব্রিজ কেঁপে ওঠে। ব্রিজটির প্রশস্ততা কম হওয়ায় নিত্য যানজট লেগে থাকে। গাড়িতে থাকা যাত্রী ও চালকরা থাকেন চরম আতঙ্কে। ব্রিজটির কাছে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। যে কোনো মুহূর্তে ব্রিজ ভেঙে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন অভিযোগ স্থানীয় জনসাধারণের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রিজটি দীর্ঘ হওয়ায়- তা নির্মাণে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষা প্রয়োজন, তার কাজ এখন চলছে। এজন্য ব্রিজটি নির্মাণে সময় বেশি লাগতে পারে।
সরেজমিনে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘৯০ এর দশকে পরশুরামের মির্জানগর, সুবার বাজার সড়কে মুহুরী নদীর ওপর স্টিলের মুহুরী ব্রিজটি নির্মিত হয়। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৩ সালের ২৭ মে এ ব্রিজটির উদ্বোধন করেন। তার পূর্বে এই নদীর ওপর কোনো ব্রিজ ছিল না। বিকল্প পথও তেমন ছিল না। তখন চিথলিয়া ও মির্জানগর ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষের উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের ভোগান্তির সীমা ছিল না। তখন পরশুরাম পৌরসভা, চিথলিয়া ইউনিয়ন ও মির্জানগর ইউনিয়নের মানুষ খুব কষ্ট করে নৌকা দিয়ে নদী পার হতেন। মানুষের দুর্ভোগ ও দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে তখনকার সময়ে কোটি টাকা ব্যয়ে এ স্টিলের বেইলি ব্রিজটির নির্মাণ করা হয়। ব্রিজ নির্মাণের কারণে এ জনপদের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং সেতুবন্ধন তৈরি হয়। বর্তমানে ব্রিজটি মানুষের জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, বিগত দুই দশকে সেতুর পার্শ্ববর্তী কাউতলী ও বাউরখুমা এলাকায় অবস্থিত মুহুরী নদী থেকে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বালু বহনকারী ছোট বড় হাইড্রোলিক পিকআপ গাড়ি চলাচলের কারণে ব্রিজের যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভারী যানবাহন ব্রিজে উঠলেই কেঁপে ওঠে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এখানে ব্রিজটির ওপর একটি গাড়ি উঠলে আরেকটি গাড়ি পাশ দিয়ে যেতে পারে না, ফলে ব্রিজের ওপর ও দুইপাশে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণকে। এ ছাড়া গত দুই বছরে এ ব্রিজ পার হতে গিয়ে তিন জনের মৃত্যু ও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী এমএ হাসান বলেন, নির্মাণের ৩২ বছরে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজটি কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকা এবং সংস্কারের অভাবে ব্রিজের স্থায়ী সমাধান হয়নি। বর্তমানে ব্রিজে ভারী যানবাহন উঠলে কেঁপে ওঠে। যাত্রী ও চালকরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পার হন। ব্রিজটির প্রশস্থতা কম থাকায় বড় একটি গাড়ি উঠলে আরেকটি গাড়ি চলাচল করতে পারে না। ফলে প্রতিদিন ব্রিজের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে শত শত গাড়ি। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী, চালক ও পথচারীদের। এখানে একটি বিকল্প গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকার সর্বস্তরের জনগণের।
পরশুরাম বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জুয়েল এ বিষয়ে বলেন, মুহুরী নদীর ওপর নির্মিত বিশাল মুহুরী ব্রিজটি একটি বেইলি ব্রিজ। নির্মাণের তিন দশক পর এটি এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আশা করছি খুব দ্রুত এখানে একটি বিকল্প গার্ডার ব্রিজ নির্মিত হবে। সুবার বাজার এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, গত তিন চার বছরে এই ব্রিজ পার হতে গিয়ে এলাকার তিনজন লোকের করুন মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, পরশুরামণ্ডসুবার বাজার সড়কে যে স্টিল ব্রিজটি রয়েছে সে ব্রিজটি যানবাহন চলাচলে কেঁপে উঠে। মাঝে মাঝে আমরা মেরামত করেছি। ভবিষ্যতে এখানে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১০০ মিটারের বেশি হওয়ায় তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষা প্রয়োজন, এজন্য সময়েরও প্রয়োজন। মুহুরী নদীর ওপর স্টিলের সেতুটি অপসারণ করে গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। এরইমধ্যে উক্ত স্থানে সয়েল টেস্টের কাজ শেষ হয়েছে, ডিজাইনের কাজও চলছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় একটি প্রজেক্টের আওতায় এই ব্রিজের নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।