ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে হাকালুকি

বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে হাকালুকি

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় আবাসিক বাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে প্রতিদিনের বর্জ্য এলোমেলোভাবে রাস্তাঘাট, খোলা জায়গা ও ড্রেনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, যা নদী বেয়ে পড়ছে গিয়েছে এশিয়ামহাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে। এতে একদিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও আবাসিক এলাকায় দেখা যায়, দোকান ও বাসাবাড়ির ময়লা রাস্তার পাশে কিংবা ফাঁকা জায়গায় ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে জুড়ীর ভবানীগঞ্জ বাজার, কামিনীগঞ্জ বাজার, জুড়ী নদীর পার, নাইট চৌমুহনা, স্টেশন রোড, জাঙ্গীরাইসহ শহরের আবাসিক এলাকাগুলো ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, আমাদের বাসা থেকে প্রতিদিন কিছু উৎকৃষ্ট বা নষ্ট ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়, কিন্তু সেগুলো ফেলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এসব কোথায় ফেলব? যেখানে-সেখানে ফেললে নিজের বিবেকেই বাধে। উপজেলা প্রশাসন কেন এখনও একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

জুড়ী বাজারের তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী খালেদ মাসুদ বলেন, বর্তমানে জুড়ী বাজারে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য কোনো উপযুক্ত ও নির্দিষ্ট স্থান নেই, যার কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে আছি। প্রতিদিন দোকান থেকে প্রচুর বর্জ্য জমে, কিন্তু সেগুলো কোথায় ফেলব-এটা নিয়ে সবসময় টেনশনে থাকতে হয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে জুড়ী নদী বা আশপাশের এলাকায় ময়লা ফেলে দেন, ফলে জুড়ী নদী ও হাকালুকি হাওরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। যেন দ্রুত বিজ্ঞানসম্মত একটি বর্জ্য নিষ্পত্তি কেন্দ্র (ডাম্পিং স্টেশন) স্থাপন করা হয়, যা আমাদের জুড়ী শহর ও পরিবেশকে রক্ষা করবে। জুড়ী উপজেলার সচেতন নাগরিক তোফায়েল আহমেদ জুড়ীর সময়কে বলেন, জুড়ী ছোট হলেও ব্যস্ত শহর। প্রতিদিন বিপুল বর্জ্য জমছে, কিন্তু এখানে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। রাস্তা, খাল ও বাজারের পাশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলা হচ্ছে সবজি, মাছ-মাংস, প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে বর্জ্য জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, মশা-মাছি বৃদ্ধি পায় এবং ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও ডায়রিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শহরের দুর্গন্ধ স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। এখনই সময় মানুষ ও প্রশাসন একসঙ্গে এগিয়ে এসে নির্দিষ্ট বর্জ্য ফেলার স্থান নির্ধারণ, নিয়মিত সংগ্রহব্যবস্থা চালু ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুম রেজা জুড়ীরসময়কে বলেন, ময়লা-আবর্জনায় নদী ও হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশনের জন্য বাছিরপুর, কাপনাপাহাড় ও জুড়ী রেলের পাশে তিনটি স্থান প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত