ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভূমিকম্প আতঙ্ক

ভেঙে ফেলা হবে সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ২৩ ভবন

ভেঙে ফেলা হবে সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ২৩ ভবন

প্রায় ছয় বছর আগে সিলেট নগরের ২৩টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো ভেঙে ফেলারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা। এতোদিন এসব ভবনের ব্যাপারে নির্বিকার ছিল সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। ফলে ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ সিলেটে এসব ভবন ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে এবার এই ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। শুক্র ও শনিবার কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর দেশজুড়ে আতংকের মধ্যে তিনি এমনটি জানান। মো. সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, সিলেট নগরীর ২৩টি বিপজ্জনক ভবন এরইমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সিসিকের তালিকানুযায়ী, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হলো- কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দর বাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন।যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেন এলাকার ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ী এলাকার ওয়ারিছ মঞ্জিল একতাণ্ড ৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতাণ্ড ৩৭৭/৮ ও শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতাণ্ড ৩৭৭/৯, বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী-১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিণপাড়ের পৌর বিপনী ও পৌর শপিং সেন্টার, এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি- প্রভাতী, শ্রীধরা হাউস।

যেগুলো খুব শিগগিরই ভেঙে ফেলা হবে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই অপসারণের কাজ শুরু হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, চিহ্নিত ভবনগুলোতে এখনো কেউ কেউ বসবাস করছে বা কাজ করছে। দ্রুত অপসারণ না করলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নাগরিকদের সুরক্ষার জন্যই আমরা জরুরিভিত্তিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন এরইমধ্যে একাধিক ওয়ার্কশপ করেছে। তবে উদ্ধারকাজে প্রধান সমস্যা হচ্ছে সংকীর্ণ রাস্তা-ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারলে রেসকিউ কার্যক্রম ব্যাহত হবে।

জানা যায়, ২০১৯ সালে কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর ঝুঁকি মোকবিলায় সিলেট নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা, সব বহুতল ভবনের ভূমিকম্পসহনীয়তা পরীক্ষাসহ কিছু উদ্যোগ নেয় সিটি কর্পোরেশন। এ সময়ে নগরের প্রায় ৪২ হাজার বহুতভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। কিন্তু অর্থ সংকটে সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি। তবে অনেক পুরোনো কয়েকটি ভবন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষার পর নগরের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিসিক। এরইমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা চারটি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুইটি ভবনকে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংস্কার করা হয়। দীর্ঘ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি স্থাপনাগুলোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিসিক। এসব স্থাপনার মধ্যে বাসাবাড়ি, বিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। নগর প্রশাসনের এমন দুর্বলতাকে পুঁজি করে উল্টো খোলস পাল্টে ফেলা হয়েছে এসব স্থাপনার। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সিলেটে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। এতে ধসে পড়তে পারে বেশিরভাগ বহুতল ভবন। তাই বহুতল ভবনগুলো ভেঙে ফেলা বা সংস্কার এবং নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানান, সিলেট মহানগরীতে যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো রয়েছে সেই ভবনগুলোর সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা খুব শিগগিরই একটি পদক্ষেপ নেব। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে একটি কমিটি আছে, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে ভবনগুলোতে সংস্কার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা তাদের সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে আমাদের কাছে তাদের কাগজপত্রাদি দাখিল করবে, আমরা সেটা খতিয়ে দেখে পরবর্তী নির্দেশনা দেব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত