ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পোকার উপদ্রব ও টানা বর্ষণে আমন ধানের ফলনে বিপর্যয়

* আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। তবে পোকার উপদ্রব ও নভেম্বরের বৃষ্টিতে মাটিতে ধান শুয়ে পড়ায় ফলন কম হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিক সংকটে বাড়তি মজুরি ও ধানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খচরা উঠা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
পোকার উপদ্রব ও টানা বর্ষণে আমন ধানের ফলনে বিপর্যয়

নওগাঁয় আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। তবে পোকার উপদ্রব ও নভেম্বরের বৃষ্টিতে মাটিতে ধান শুয়ে পড়ায় ফলন কম হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিক সংকটে বাড়তি মজুরি ও ধানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খচরা উঠা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে- জেলায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৪১ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। যা থেকে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩০ টন ধান উৎপাদনের আশা। তবে নভেম্বরের বৃষ্টিতে অন্তত ২ হাজার ৮৬১ হেক্টর আবাদ নষ্ট হয়। যা থেকে প্রায় ১০ হাজার টনের বেশি ধান উৎপাদন হতো। চারিদিকে সোনালি রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। অবারিত প্রান্তরে শস্যের দোলা হাসি ফোটায় কৃষকের মুখে। উত্তরের জেলায় নওগাঁর মাঠে মাঠে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। কাস্তে হাতে ধান কাটছে কৃষক। আর পেছনে শালিক পাখি ঝাঁক বেঁধে খুঁজছে আহার। নতুন ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের আনন্দের বদলে মলিন মুখ।

কৃষকরা জানান- গত বছরের তুলনায় এ বছর ধানের আবাদে সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিঘাতে ২-৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বাড়তি কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিতে ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিঘাতে ফলন কমেছে ৪-৫ মণ। এতে বিঘাতে খরচ পড়েছে অন্তত ১৫ হাজার টাকা।

গতকাল রোববার জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরি সাপ্তাহিক হাটবার। সপ্তাহের ব্যবধানে এ হাটে মণে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমেছে দাম। তবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মনে অন্তত ১০০ টাকা কমেছে। এদিন হাটে আমন ব্রি-৭৫ ধান ১ হাজার ৫০ টাকা মণ, স্বর্না-৫ ধান ১ হাজার ১৩০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা, ব্রি-৪৯ ধান ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা এবং ব্রি-৯০ ধান ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। তবে বোরো মৌসুমের পুরাতন ধান সুবর্ণলতা ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং কাটারিভোগ ও জিরাশাইল ধান ১ হাজার ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। হাটে ধান বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক আলামিন বলেন- ১৪ বিঘা জমিতে স্বর্না-৫ ধানের আবাদ করা হয়। প্রতিবিঘায় গড় ফলন হয়েছে ২০ মণ। বিঘাতে খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ২৩ মণ ধান ১ হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হয়েছে। এ দামে ধান বিক্রি করে বিঘায় ৬-৮ হাজার টাকা লাভ দিয়ে কোনো সুবিধা হবে না। অন্তত ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ হলে খরচ বাদে কিছুটা লাভ থাকবে।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলম বলেন- এ বছর ৩ বিঘা জমিতে স্বর্না-৫ ধানের আবাদ করা হয়। শুরুতে আবাদ ভালো হয়ছিল। তবে নভেম্বরের বৃষ্টিতে ১০ কাঠা জমির ধান পুরোটা নষ্ট হয়ে যায়। এতে অন্তত ১২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। একই উপজেলার আখেড়া গ্রামের কৃষক প্রদীপ কুমার বলেন- ধানে প্রচুর পোকার উপদ্রব হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩ বার বাড়তি কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। এতে বিঘায় ৫০০ টাকার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। ধানে পোকার উপদ্রব হওয়ায় ফলনের পরিমাণ কম হবে। মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের কৃষক আফসার আলী বলেন- এক বিঘা জমিতে স্বর্না-৫ ধানের আবাদ করেছিলাম। বৃষ্টিতে পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ে।

এদিকে শ্রমিক সংকট হওয়ায় মজুরিও বাড়তি। তাই নিজেই ধান কাটতে হয়েছে। ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় কাটতে সময় বেশি লেগেছে এবং ফলন পেয়েছি ১৬ মন। ধান খাড়া থাকলে ফলন আরও বেশি হতো। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন- বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও পোকার উপদ্রব কমেছে। এ বছর ৯ লাখ ৮৫ হাজার টনের বেশি ধান উৎপাদন হবে। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো প্রভাব পড়বে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত