
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড চিনিকলে ১০৪ জন মৌসুমি শ্রমিক ও কর্মচারীকে স্থায়ীকরণে কর্তব্যে অবহেলা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগে মিলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ১০ জন কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড ও লঘুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার দর্শনা কেরু চিনিকলে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পৌঁছানোর পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কেরু চিনিকলের শ্রমিকদের মৌসুমি থেকে স্থায়ীকরণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসের প্রথম দিকে দেশের সব চিনিকলের মৌসুমি শ্রমিক ও কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়, যা অনুমোদিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১৩ ও ১৪ মে সারাদেশের চিনিকলগুলোতে একযোগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কেরু চিনিকলে মোট ১৪০ জন মৌসুমি শ্রমিক ও কর্মচারী পরীক্ষায় অংশ নেন। তবে স্থায়ীকরণে মেধাভিত্তিক নির্বাচন উপেক্ষা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে বঞ্চিত দুই কর্মচারী কর্পোরেশনে লিখিত অভিযোগ ও মামলা করেন। এ বিষয়ে তৎকালীন চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের সচিব চৌধুরী শহিদুল্লাহ কায়ছার ২০২৩ সালের ১৫ মে কেরু চিনিকলের এমডি বরাবর এক জরুরি পত্রে স্থায়ীকরণের সব কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন। দেশের অন্যান্য চিনিকল এই নির্দেশনা মানলেও কেরু চিনিকল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ১৪০ জনের মধ্যে ১০৪ জনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে স্থায়ীকরণ সম্পন্ন করে।
পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২৩ সালের ১৭ মে তৎকালীন কর্পোরেশন চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম (এনডিসি) কেরু চিনিকলের এমডি মোশাররফ হোসেনের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। এরপর চিনি কর্পোরেশন ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রশিদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে জানা যায়, তৎকালীন এমডি মো. মোশাররফ হোসেন, সদর দপ্তরের কর্মকর্তা সাইফুল আলম, কেরু চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ইউসুফ আলী ও লেবার অফিসার মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে কর্পেরেশন প্রবিধিমালা অনুযায়ী গুরুদণ্ড ও বেতনবৃদ্ধি স্থগিত রাখার শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, যা ৩০ জুন ২০২৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এ ছাড়া মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুস সাত্তার, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন কুমার সাহা, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) রাজিবুল হাসান, ব্যবস্থাপক (খামার) সুমন কুমার ও পরিবহন প্রকৌশলী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৮৯ সালের প্রবিধিমালার ৩৮ ধারা অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শাস্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি কার্যকর হবে না। এ বিষয়ে দর্শনা কেরু চিনিকলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান (এফসিএমএ) জানান, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সদর দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে।