ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দারিদ্র্য জয়ই বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ

মো. তাহমিদ রহমান
দারিদ্র্য জয়ই বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ

দেশের অগ্রগতির যাবতীয় অর্জন ম্লান হয়ে যায় অতিদরিদ্র জনসংখ্যার দিকে তাকালে। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। মানুষের জীবন যাপন, খাওয়া-পরা, শিক্ষা, চিকিৎসার চাইতে অনৈতিক রাজনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তিকে অতি গুরুত্ব দিলে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনসাধারণের অবস্থা এমন হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি এবং মাথাপিছু বার্ষিক আয় ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলার। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হলেও দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে চলতি বছরে বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। শুধু অতি দারিদ্র্য হার নয়; জাতীয় দারিদ্র্য হারও বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উঠবে। জাতীয় দারিদ্র্য হার গত বছরে ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০২৫ সালে তা বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা অনুসারে একজন ব্যক্তি দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতি দরিদ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যসীমার মানদ- হলো খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা কেনার জন্য একজন ব্যক্তি প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকা খরচ করার সামর্থ্য না থাকলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছেন বলে গণ্য করা হয়। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) গবেষণা তথ্য অনুযায়ী গত দুই বছরে অন্তত ৭৮ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৮ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। আর ৯৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। অতিদারিদ্র্যের অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঘিরে দুর্নীতি, অপচয় প্রতিরোধ না করা ও প্রকৃত সুবিধাভোগী শনাক্ত না হওয়া। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৩৩ লাখ বয়স্ক ও ২৫ লাখ বিধবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা ভাতা পাওয়ার অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। এতে করে তাদের পেছনে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বয়স্ক ও বিধবাকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। আসন্ন বাজেটে নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জনকে বিভিন্ন ভাতার অওতায় আনা হচ্ছে। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আসবেন ১০ লাখ ২৬ হাজার জন। ফলে ওই হিসাবে আগামী অর্থবছরে কমছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনী। অর্থ বিভাগের হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৯৯ হাজার জনকে যুক্ত করে আগামী বাজেটে ৬১ লাখ বৃদ্ধকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। এতে বরাদ্দ থাকছে ৪ হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ কর্মসূচিতে ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধবা ভাতাভোগীতে নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার জন। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বেড়ে ২৯ লাখে উন্নীত হবে। অর্থ বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে ভাতার অঙ্ক ১০০ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্যক্রমও বাড়ছে। উপকারভোগী ৩২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে- ৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ খাতে তিন হাজার ৩২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় যে অঙ্কে ভাতা প্রদান করা হয় তা দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন করা খুবই কঠিন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে নিম্নবিত্ত মানুষকে চড়া দামে নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে ১০ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় চার শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এই একই সময়ে দক্ষ কর্মীদের মজুরি দুই শতাংশ ও উচ্চ দক্ষ কর্মীদের মজুরি দশমিক পাঁচ শতাংশ কমেছে। ফলে প্রকৃত মজুরি ক্রমাগতভাবে কমছে। প্রকৃত মজুরি কমলে দারিদ্র্য সীমার উপরে যারা আছে, তারাও দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে আসে।

দরিদ্র্য বাড়ার এটা অন্যতম একটি কারণ। অনেক মানুষ আছে যারা দারিদ্র্যসীমার অনেক কাছাকাছি অবস্থান করে। দু‘একদিন কাজ না করলেই তারা দারিদ্র্যসীমার নীচে পরে যাবে। বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই সংঘাতকবলিত দেশের বাসিন্দা। চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশের বেশি বসবাস করেন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ এমন পরিবারে আছেন, যে পরিবারের অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। চরম দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলো সাধারণত পুষ্টিজাতীয় খাবারের অভাবে ভোগে।

এই কারণে এধরনের পরিবারের সদস্যরা দৈহিকভাবে খুব দুর্বল থাকে। ফলে কায়িক শ্রমনির্ভর কর্মকাণ্ডে তাদের চাহিদা খুব একটা থাকে না এবং কাজ যদিও জোটে, মজুরি এত কম থাকে যে তা দিয়ে শরীরের পুষ্টিগত উন্নয়ন সম্ভব হয় না। আর পুষ্টিগত সমস্যা থাকে বলেই বেশি মজুরির কাজ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ চরম দারিদ্র্যে পতিত পরিবারগুলো সর্বদাই এক ধরনের ‘দারিদ্র্যের জালে’ আবর্তিত হতে থাকে। এটি এমন এক ফাঁদ যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরিত হতে থাকে। বিশ্বের অর্থনৈতিক ধারা এমনভাবে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিত্তশালীকে আরও বিত্তবান হতে সাহায্য করছে কিন্তু সে অর্থনীতি দারিদ্র্যে নিষ্পেষিত জনগণের সামান্যতম সহায়তা করছে না। বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে দারিদ্র্যের পরিমাণ ও গভীরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সময়ের পরিক্রমায় স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও জনতার জীবন মানের উন্নয়নের জাতির কর্ণধারদের কাণ্ডজ্ঞানের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। জনগণের জীবনমানের মৌলিক চাহিদা খাওয়া-পরার সমস্যাকে সমাধান করার চাইতে নিজেদের আখের গোছাতেই তারা বেশি ব্যস্ত। দেশের জনগণের জীবনমানের অবস্থা যাই হোক না কেন, কর্তাবাবুগন তাদের নিজেদের লক্ষ্য কখনোই পরিবর্তন করেন না। জনগণের খাওয়া-পরা, বেঁচে থাকার মতো বিষয়গুলো বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যদি শুধুই নিজেদের সুবিধা প্রাপ্তির জন্য লড়াই করে যান তাহলে দেশের যে ধরনের অনিবার্য পরিণতি হওয়ার কথা ঠিক তাই ঘটতেছে, আমাদের ক্ষেত্রে। বিগত দিনগুলোতে সকল সরকারই জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের চাইতে চমক সৃষ্টিতে বেশি আগ্রহী ছিল। এতে সাময়িক বাহবা লাভ করলেও আখেরে দেশ ও দল কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনেনি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে বাংলাদেশের এমন গন্তব্যে পৌঁছনো অপ্রত্যাশিত।

দেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১১ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকিতে এবং ২৩ দশমিক ছয় শতাংশের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বয়সের তুলনায় যথেষ্ট কম। অর্থাৎ জীবনের শুরুতেই পিছিয়ে যাচ্ছে তারা। আর তাতে করে মানবসম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ শৈশব থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের এগোনোর পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই মঙ্গাপীড়িত (বৃহত্তর রংপুর), নদীভাঙন (সিরাজগঞ্জ), লবণাক্ত (উপকূলীয়) এবং অতি নিম্নাঞ্চলে (সুনামগঞ্জ) বসবাস করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার ৯ মাস পরও সেটা কমানো যায়নি। রাষ্ট্র ব্যবস্থার এই সমস্যাগুলো কাউকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কের নিবিড় পর্যবেক্ষণেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান উঠে আসার কথা।

এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা না হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। অতিদরিদ্র নিরসনে বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচন ও নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে জোরালো কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, সে হারে রোজগার না বাড়লে মানুষ দারিদ্র্যের চক্রে ঘুরপাক খাবে। এই অবস্থার উত্তরণে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলমান বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে কারণ এগুলো সরাসরি দরিদ্র পরিবার ও নারীদের ওপর প্রভাব ফেলে। দেশে অতিদারিদ্র্য কমাতে হলে জনগণকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিরক্ষর রেখে শুধুমাত্র জনপ্রতি আয় বা জিডিপি বৃদ্ধি পেলেই সে দেশে দারিদ্র্য কমে যাবে এমনটি আশা করা বোকামি। আয় বণ্টনের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট মজুরিনীতি প্রণয়ন করতে হবে। শিল্প ও কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম মজুরি-নীতি ও জাতীয় মজুরি নীতির দ্বারা ঠিক করতে হবে, এতে আয়ের সুষম বণ্টন হবে এবং আয়গত বৈষম্য অনেকটা হ্রাস পাবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন এবং অধিকাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। ভূমি আইনের সংস্কার সাধন করে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে ভূমি বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে আয়ের অসমতাও দূর হবে। রাষ্ট্র নেতাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হওয়া উচিত কৃষি ও কৃষিজীবী সম্বন্ধে যথাযথ পরিসংখ্যান নির্ণয়, দারিদ্র্য সীমারেখার যথাযথ সংজ্ঞা নির্ধারণ, দারিদ্র্যসীমায় বসবাসকারীর সংখ্যা কত তা নিরূপণের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেওয়া। যদি তা না হয় তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং জাতীয়স্তরে বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়াবে।

‘তিন শূন্য তত্ত্ব’ আর্থিক স্বাধীনতা, কর্মঠ জনশক্তি তৈরি এবং পরিবেশ উন্নয়নে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর একটি মডেল। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকার গৃহীত কার্যক্রমে ‘তিন শূন্য তত্ত্ব’ যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। অতিদারিদ্র্য মুক্ত দেশ গড়তে প্রবৃদ্ধিকে করে তুলতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। গণমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শূন্য দারিদ্র্যের ব্যাপারে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছিলেন- ‘দারিদ্র্য কোনো স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অবস্থা নয়; বরং এটি একটি মানবসৃষ্ট অবস্থা, যা সম্পদের অসম বণ্টনের ফলস্বরূপ তৈরি। কেননা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য আমাদের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে হবে। তাই এক্ষেত্রে মাইক্রোফাইন্যান্স ফলপ্রসূ উদ্যোগ। এ প্রেক্ষাপটে সামাজিক ব্যবসার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন যে, এর মাধ্যমে দরিদ্রদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ উন্মোচিত হবে, যেখানে লাভের চেয়ে সমাজের কল্যাণ বেশি প্রাধান্য পাবেৎ’। বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারাজীবন দারিদ্র্য দূরীকরণের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। তিন শূন্য তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছেন। তিন শূন্য তত্ত্বের একটি হচ্ছে শূন্য দারিদ্র্য। তাই দেশের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে আশা করছি অতিদারিদ্র্য কীভাবে বিলোপ করা যায়, সেব্যাপারে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। মানব কল্যাণে গৃহীত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন শূন্য তত্ত্ব সফলপূর্বক অতিদারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনুক।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত