এরইমধ্যে দুই দেশের মধ্যে হামলা-পালটা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে ১৯৬২ সালে দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান। এরপর পাকিস্তানের ছয়টি শহরের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে অন্তত ৩১ বেসামরিক লোক নিহত ও ৫৭ জন আহত হওয়ার কথা বলেছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ভারতকে চরম প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন। ভারতের ওই হামলার পর কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুদেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে লাহোরে ভারতের একটি ‘স্পাই ড্রোন’ ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান পুলিশ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই বৃহৎ দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অতীতে দেশ দুটির মধ্যে কয়েকবার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যা ব্যাপক রক্তক্ষয়ের কারণ হয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে গেলে এর পরিণতি কী হবে, তা কেউ বলতে পারে না। কোনো যুদ্ধে শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণই যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, পার্শ্ববর্তী দেশের জনগণের ওপরও পড়ে এর বিরূপ প্রভাব। এরমধ্যেই ভারত-পাকিস্তান আকাশপথ অনিরাপদ বিবেচনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা তাদের বাংলাদেশগামী ফ্লাইটের গন্তব্য পরিবর্তন করেছে। সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হলে এর নিশ্চিত প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।
দেশ দুটির মধ্যে পরস্পরকে লক্ষ্য করে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি তো আছেই। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও পড়তে পারে এর ভয়াবহ প্রভাব। বস্তুত যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বিশ্বের অন্যত্রও তা ছড়িয়ে পড়ে; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। যুদ্ধ প্রধানত সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। ভারত ও পাকিস্তান সরকারকে এটা অনুধাবন করতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানের জনগণকে শান্তির পক্ষে সোচ্চার হতে হবে। বিদ্যমান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইতে হবে তাদের।