বাংলাদেশের মানুষের নিপীড়নের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আমরা ইতিহাসের নানা বাঁকবদলের সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাধ্যমে শাসিত ও শোষিত হয়েছি। এর মধ্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলকে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় এই কারণে যে, প্রায় দুইশ’ বছরের গোলামির মাধ্যমে আমাদের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়। দুর্নীতি ও জাতীয় বিভাজনের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা মূলত তখন থেকেই আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। এর সঙ্গে রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমলাতন্ত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের গত দেড় দশকের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে পাক আমলের সঙ্গে কোথায় যেন কিছুটা হলেও মিল পাওয়া যায়। এখানেও মানুষের মনে যতই কষ্ট, যতই প্রতিবাদ জমা হোক না কেন, তা প্রকাশ করতে গেলেই ছিল বিপদ। গুম খুন ক্রসফায়ার মামলা হামলা ইত্যাদির ডেমোক্লিসের তরবারি সব সময় মাথার ওপর ঝুলত। স্বৈরাচারী শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হলেও সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করতে পারত না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাবে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। অবশেষে এলো জুলাই চব্বিশের তারুণ্যনির্ভর আন্দোলন। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কিছু অন্যায্য নীতিমালার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা গড়ে তুলল ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত একটি আন্দোলন, যাকে বলা হলো কোটাবিরোধী আন্দোলন। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্য সমর্থন ছাড়াই রাজপথে নামল বিপুল জনসমর্থন নিয়ে। শিক্ষার্থীরা যখন একাত্মতা ঘোষণা করে ওই নামণ্ডগোত্রহীন মানুষের সঙ্গে এককাতারে দাঁড়াল, তখন ছাত্র-জনতার এই অভূতপূর্ব সম্মিলন শাসকগোষ্ঠীর ভিত দিল কাঁপিয়ে। দুনিয়ায় আমরা তো একমাত্র রাষ্ট্র নই। আরও দেশ আছে। সেসব দেশেও আমরা দীর্ঘকাল নির্বাচিত স্বৈরশাসন দেখেছি। যেমন: ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, জিম্বাবুয়ের নাম উল্লেখযোগ্য।
এসব দেশে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন হতো। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট প্রতিবারই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হতেন। এসবের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ভীষণ। সেসব দেশে গণঅভ্যুত্থানে কিংবা সেনা-অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ শিক্ষা নিয়েছে। ফিলিপাইন আর দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ সংবিধানে এমন একটি ধারা ঢুকিয়েছে যে, কেউ এক মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। ফলে ওইসব দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বেগবান হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতারা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন তা তারা জানেন, আমরাও বুঝি। কিন্তু মুখে তারা এটি বলবেন না। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গলায় প্রায়ই শুনতাম, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশে নাকি স্থিতিশীলতা আসে না, উন্নয়ন হয় না। এর অর্থ হলো, তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন ধারাবাহিকভাবে। তার অনুচর আর চাটুকাররা বলাবলি করত, দেশে যত উন্নয়ন হচ্ছে, এসবই তার অবদান। উন্নয়ন যে সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে, ব্যক্তির মর্জির ওপর নয়; উন্নয়নের খরচ আসে জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায়, নেতার পকেট থেকে আসে না- এটা তাদের কে বোঝাবে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে অনেক মুখরোচক শব্দ আছে। অর্থ না বুঝেই আমরা অহরহ এসব আওড়াই। এরকম একটি স্বাদু শব্দ হলো গণতন্ত্র। আর এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা
ততটুকু গণতন্ত্র দেবেন, যতটুকু দিলে তাদের নেতৃত্ব ঝুঁকিতে পড়বে না। রাজনৈতিক দল হয় অনেক লোককে নিয়ে। সেখানে পারস্পরিক আলোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সবাই সব ব্যাপারে একমত হবেন, এটা সচরাচর ঘটে না। সে ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়। এটা হলো ক্ল্যাসিক্যাল গণতন্ত্রের কেতাবি কথা। বাস্তবে এর চর্চা নেই আমাদের দেশে।
যদিও মাঝেমধ্যে দুর্যোগ আসে। এক-এগারো ছিল একটা বড় রাজনৈতিক সুনামি। তার ধাক্কায় রাজনৈতিক দলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। পরে তারা এটি সামলে নেয়। কিন্তু তারা এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। গণতন্ত্রের চর্চা ধারাবাহিকভাবে ব্যাহত হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে গণ-বিদ্রোহ সংঘটিত হলো। এখনও যদি আমরা নিজেদের না বদলাই, পুরোনো ধারাকেই আঁকড়ে থাকি, তাহলে সামনে আরও বড় ঝড় অপেক্ষা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে মানুষের মনে পড়তে হবে। মানুষ তাদের সারমন বা ওয়াজ শুনতে আর রাজি নন। চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যখন সমাজের সব স্তরের মানুষ তাদের সমর্থনে বেরিয়ে এলো, তখনই এটি সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিল। এই আন্দোলনে জয় হয়েছে জনতার। পরাজিত হয়েছে রাজনৈতিক অলিগার্ক ও পারিবারিক সিন্ডিকেট। এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই আন্দোলনে অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকলেও এটি কোনো দলের ব্যানারে হয়নি। এর আগে দলের ব্যানারে যত আন্দোলন হয়েছে, কোনোটিই সফল হয়নি। এটি বুঝতে হবে। পরাজিতরা এর মধ্যে যতই ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়াক না কেন, এটি ছিল গণবিস্ফোরণের একটি অনন্য উদাহরণ। ইতিহাসের চাকা পেছন দিকে আর ফেরানো যাবে না। এই উপলব্ধি আসতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বা তার উপদেষ্টারা কী চান, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা যা বলছেন, তাতে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আছে কি না। দেশটা অন্তর্বর্তী সরকার বা সংস্কার কমিশনের নয়। দেশ ১৭ কোটি মানুষের। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রয় ৯ মাস পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ তার দীর্ঘ ৫৩ বছরের বেশি সময়ের পথপরিক্রমায় এমন অভূতপূর্ব সময় আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি মানুষ।
বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পালাবদল, সরকার পতনের আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন, বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে মিটিং-মিছিল, রাজনৈতিক হত্যা- এসবের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। শুধু তাই নয়, আমরা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান ও তার পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ এতটাই দ্রুততার সঙ্গে ঘটে গেছে যে, অনেকেই এত কিছু একসঙ্গে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুব দ্রুততার সঙ্গে রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সবার অলক্ষ্যে দেশত্যাগের মতো ঘটনার সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছে এ দেশের মানুষ। এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংগত কারণেই এক অস্থিতিশীল সময় পার করছি আমরা। আমাদের খুব দ্রুত বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলছে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক আচরণে। এমনকি তা প্রভাবিত করছে আমাদের পেশাগত জীবন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আচরণকে। অস্থিতিশীল এই সময়ে মানসিকভাবে ভালো নেই অনেকেই। আন্দোলনের দিনগুলোতে যারা স্বজন হারিয়েছেন, বিভিন্ন সহিংসতা আর বীভৎসতার শিকার হয়েছেন কিংবা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাদের এই রেশ কাটিয়ে উঠতে এমনিতেই অনেক সময় লাগবে। তার ওপর আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার অভাব, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও লুটতরাজ প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা, লাগামহীন দুর্নীতি উন্মোচনের খবর, চরম প্রভাবশালীদের নিদারুণ পরিণতি দেখার মনস্তাত্ত্বিক চাপ, পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে নানা মত ও পথের ভিন্নতার সাক্ষী হওয়া- এর সবকিছুর প্রভাব একযোগে পড়ছে মানুষের ওপর।
সাধারণত পরিবর্তনের এই সময়গুলো হয় খুব ভয়ংকর। এই সময়গুলোতে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে না পারলে গণআন্দোলনের ফল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। প্রতিদিনই আমরা মুখোমুখি হচ্ছি মন খারাপ করার মতো অনেক কিছুর সঙ্গে। একদিকে বিগত সরকারের পর্বতসমান লুটপাট আর দুর্নীতির নতুন নতুন খবর আর অন্যদিকে দেশের নতুন প্রেক্ষাপটে অস্থিতিশীলতা, নৈরাজ্য, সুবিধাবাদী শ্রেণির আবির্ভাব নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলছে দেশের প্রতিটি মানুষকে। বিগত সরকারের দুর্নীতির চালচিত্র এত দিন আমাদের অজানা ছিল, তা বলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু দুর্নীতি আর লুটপাটের বাস্তবরূপ যে কতটা বীভৎস আর ভয়ংকর হতে পারে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা ছিল। এত দিনের ঢেকে রাখা দুর্নীতির খবরগুলো একযোগে বেরিয়ে আসছে জোয়ারের পানির মতো। লুটপাটে অর্জিত আর পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ টাকার অঙ্কে এতটাই বড় যে, তা আমাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আছে গুম, হত্যা, অরাজকতা, স্বজনপ্রীতি, সহিংসতার নানা ইতিহাস উন্মোচনের খবর। যাদের আমরা এত দিন দোর্দণ্ড ক্ষমতাশালী হিসেবে দেখেছি, তাদেরই আজ প্রকাশ্যে ধরাশায়ী হতে দেখে কেউ কেউ বিস্ময়ে বাক?রুদ্ধ হয়ে পড়ছেন আবার কেউবা একধরনের পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের খবর দেখতে দেখতে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এই বাড়তি চাপ নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি অনেকেরই নেই। ফলে অনেকের অসংলগ্ন, অসহিষ্ণু ও অপরিণত আচরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে আসল-নকল আর সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব। আন্দোলন-পরবর্তী ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের হঠাৎ সীমাহীন স্বাধীনতা কলুষিত করে ফেলছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
এসব মাত্রাজ্ঞান শূন্যের মতো যা খুশি তাই পোস্ট দিচ্ছে কে বা কারা, শুধু এখানেই শেষ নয়, এই কনটেন্টগুলো অনেকেই শেয়ার করছেন, মন্তব্য করছেন। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কিনা জানি না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভীষণ অপরিণত, অসহিষ্ণু ও আক্রমণাত্মক আচরণের পরিচয় দিচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকেই অন্যের মতামত সহ্য করতে কিংবা অন্যের মন্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারছেন না। ফলে তা প্রভাব ফেলছে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওয়াল ছাপিয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। পরিবর্তনের এই সময়ে প্রয়োজন প্রচুর ধৈর্য, সহিষ্ণুতা আর পরিণত আচরণ। আমাদের অসতর্ক ও অসহিষ্ণু আচরণের ফাঁক গলে সুযোগ সন্ধানীরা এরই মধ্যে তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। সেই সুযোগসন্ধানীদের যে কোনো প্রকারে থামাতে হবে। একমাত্র জাতীয় ঐক্যই পারে সেই চেষ্টাকে রুখে দিতে। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে হানাহানি করলে আমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ব এবং আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কখনওই পৌঁছাতে পারব না। মনে রাখতে হবে, আজকের এই নতুন বাংলাদেশ রচনার গৌরব কিন্তু আমাদের সবার। আমাদের সামান্য অসতর্ক আচরণে তা যেন ম্লান না হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে এই চর্চার ফলাফল হলো, জাতি হিসেবে আমাদের বিভাজিত থাকা, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থেও বিগত সময়গুলোয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে বাধা হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় ঐকমত্য সেই হিসেবে কঠিন একটা বিষয় হলেও সেটি দেশের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক