রাজধানী ঢাকা এক আন্দোলন-বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এতে প্রায়ই অচল হয়ে পড়ছে জনজীবন। গত বুধবারের কথাই ধরা যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় শোক, ক্ষোভ আর প্রতিবাদে দিনভর উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। শিক্ষার্থীরা ঘেরাও করেন উপাচার্যের বাসভবন। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করলে এতে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান নিক্ষেপের ফলে শিক্ষকসহ অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন।
গত বৃহস্পতিবার কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন এই আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসাবে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তার কয়েকশ সমর্থক। বিক্ষোভের ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে দুপুরে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। পরে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান নেন। জানা যায়, অনেক রাত পর্যন্ত সেখানে তারা অবস্থান করেছেন। এসব আন্দোলন-বিক্ষোভের ফলে এদিন রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
আমরা মনে করি, যেসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অথবা যেসব প্রতিবাদ হিসাবে বিক্ষোভণ্ডঅবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করা হয়, সেসব দাবি বা প্রতিবাদ যুক্তিসংগত হলেও কারও এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত নয়, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ ঘটায়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও গোষ্ঠীকে তাদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সেসব ক্ষেত্রেও যানজট সৃষ্টি হয়ে তা জনদুর্ভোগের কারণ হয়েছে। তাই সব পেশাজীবী ও গোষ্ঠীরই উচিত জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মসূচি পরিহার করা। বস্তুত কথায় কথায় সড়ক অবরোধের প্রবণতা থেকে সবারই সরে আসা উচিত।
প্রত্যেকেরই বোঝা উচিত, এ প্রবণতা চলতে থাকলে আজ যারা অবরোধ করছেন, তারাও অথবা তাদের অসুস্থ বা বৃদ্ধ স্বজনরাও কখনও এমন দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন। একইসঙ্গে আমরা একথাও বলব, কোনো গোষ্ঠী কোনো দাবি-দাওয়া উত্থাপন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। পাশাপাশি রাজধানীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত, যারা সার্বক্ষণিকভাবে এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন।