‘আকাশে শান্তির নীড়’ স্লোগান দেখে যাত্রীরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমানে ওঠেন। কিন্তু বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে আকাশ যাত্রাটা তাদের জীবনাশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত শুক্রবার (১৬ মে) এমনই এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ বিমানের ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজের যাত্রীরা। সেদিন কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ওড়ার পর উড়োজাহাজের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। পাইলট ভয়ানক এ বার্তা ঢাকার কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানান। ঢাকায় বিমানটির জরুরি অবতরণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ঢাকার রানওয়ে ও আশপাশের এলাকায় নেয়া হয় সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। তার পরও নিরাপদ অবতরণের বিষয়ে গভীর উৎকণ্ঠা ছিল সবার মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অভিজ্ঞ পাইলট একটি চাকা ছাড়াই নিরাপদে উড়োজাহাজটি রানওয়ে স্পর্শ করাতে সক্ষম হন। এর ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান ওই ফ্লাইটের এক শিশুসহ ৭১ যাত্রী, পাইলট ও কেবিন ক্রু।
গত ৫ মে বিমানের ‘গলার কাঁটা’ দুটি বোয়িং ৭৩৭ ও ড্যাশ-৮’ শিরোনামে নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনেও বিমানের উড়োজাহাজে বারবার ত্রুটি ধরা পড়ার কথা বলা হয়েছে। গণমাধ্যমে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি বারবার আলোচিত হলেও বিমান কর্তৃপক্ষ আদৌ সতর্ক থাকেন কি না বোঝা মুশকিল। সতর্ক থাকলে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজে কী করে এতবড় ত্রুটি হলো তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বিমানের চাকা খুলে পড়া স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এটি বিমানের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের আলামত। বিমান ওড়ার আগে প্রকৌশলীদের চেক ও রি-চেক যে ত্রুটিপূর্ণ থাকে এটি তারই প্রমাণ বহন করে। একই সঙ্গে বিমানের পুরোনো যন্ত্রপাতি পাল্টানোর দরকার হয়। পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে বিমানে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এ ধরনের দুর্ঘটনায় বিমানের ইঞ্জিনিয়ারদের শাস্তি দেয়া হলেও তাদের শাস্তি ভোগ করতে হয় না। বিভিন্ন কায়দা কানুন করে তারা রেহাই পেয়ে যান। বিমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিমানে ভ্রমণে হার বাড়ছে। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না। প্রতি বছর বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনসের রেটিং করা লন্ডনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্কাইট্র্যাক্সের ২০২৪ সালের রেটিংয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ বিমান ও বিমানসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কতটা নজরে আসে আমাদের জানা নেই। সব ক্ষেত্রে শুধু পিছিয়ে থাকাই যেন আমাদের নিয়তি।
ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে বিমান বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতির আখড়া। বিমানের পরতে পরতে দুর্নীতি ছিল। স্বৈরাচারের অবসানের পর এখন বিমান উন্নত ব্যবস্থাপনায় ফিরবে এটাই মানুষ আশা করে। বিমানসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিমানকে একটি বিশ্বমানের সংস্থায় পরিণত করতে সচেষ্ট হবেন এটিই কাম্য।