ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও অধিকার প্রদান করেছে

মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন
ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও অধিকার প্রদান করেছে

ইসলাম মানবতা ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম নারীকে এত সম্মান ও মর্যাদা দেয়নি। ইসলাম নারীকে কখনও মা হিসেবে, কখনও স্ত্রী হিসেবে, কখনও মেয়ে হিসেবে, আবার কখনও বোন হিসেবে সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। ইসলাম ধর্মে নারীকে দেওয়া হয় আত্মমর্যাদা, শিক্ষার অধিকার, সম্পদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মানের পূর্ণ নিশ্চয়তা। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারীকে দিয়েছে জান-মালের নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও সর্বোচ্চ সম্মান।

তাই বলা যায়, ইসলামই প্রথম নারী-অধিকার রক্ষাকারী ধর্ম। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে সমাজে নারীদের বিন্দুমাত্র অধিকার ও সম্মান ছিল না। ইসলামপূর্ব যুগে নারীদের কোনো সম্মান, অধিকার বা সামাজিক অবস্থান ছিল না। নারী ছিল শুধু ভোগের বস্তু, উত্তরাধিকারগত সম্পত্তির অধিকারছিল না। সে অমানবিক যুগে ইসলামের আবির্ভাব নারী জাতির জন্য ছিল এক আলোকবর্তিকা।

মহানবী (সা.) মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে জাহেলিয়াতের গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জাতিকে একটি বিশ্ববিজয়ী জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হন।

ইসলাম পূর্ব যুগে নারী ছিল সবচেয়ে অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অধিকার হারা জাতি। সে সময় নারীকে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বাজারের পণ্য হিসাবে গণ্য করা হতো। সেই সময়ে নারীদের মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হতো না এবং তাদের কোনো সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানব জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিল না। তাদের প্রতি খুবই কঠোর আচরণ করা হতো। সে যুগে নারীদের মনে করা হতো দাসী এবং ভারবাহী পশু হিসাবে। যাদের ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। ইচ্ছা করলে তার স্ত্রীকে অপরের কাছে বিক্রি করে দিতে পারত কিংবা স্ত্রীকে দিয়েই কেউ ঋণ পরিশোধ করত। আবার কেউ উপহার হিসাবে কাউকে এমনিই দিয়ে দিত। তারা কন্যা সন্তান জন্মকে লজ্জাজনক মনে করে স্বীয় নিষ্পাপ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও কুণ্ঠিত হতো না।

প্রাচীন ভারতে ছিল সতীদাহ প্রথা। স্বামীহারা বিধবা মহিলাদের জোর করে চিতায় অগ্নি দাহ্য করা হতো। ইসলাম ও মুসলমানরা ভারতবর্ষে এসে এই বর্বরতা রুখে দিয়েছে। ইসলাম নারীকে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। প্লেটো তার রিপাবলিকান গ্রন্থে সমাজতন্ত্রের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এলিট শ্রেণির জন্য কোনো সম্পদ ও স্ত্রীলোক থাকবে না। বিভিন্ন কমিউনে মেয়েরা থাকবে, সেখানে সবাই যৌথভাবে মিলিত হবে ( গণবেইশ্যালয়)। উৎপাদিত সন্তানরা হবে যৌত এবং সরকারিভাবে প্রতিপালিত।

ইসলাম নারীকে দিয়েছে মায়ের সম্মান, স্ত্রীর অধিকার ও কন্যার স্নেহ। নারীই আমাদের মমতাময়ী মা, প্রিয়তমা স্ত্রী, স্নেহের বোন বা আদরের সোনামণি মেয়ে। নারী জাতি হলো মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তা’আলা নারীকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসাবে মানব জীবন পরিচালনার জন্য পারস্পরিক সহযোগী করেছেন। ইসলাম মর্যাদার দিক দিয়ে নারীকে পুরুষের থেকে ভিন্ন করে দেখেনি।

কন্যার অধিকার: মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’ কন্যার অধিকার সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে কন্যা সন্তান হত্যা কর না। তোমাদের সবার রিযিক আমি দিয়ে থাকি। (সূরা বনী ইসরাইল-৩১)। যাকে কন্যা সন্তানের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় আর সে কন্যার প্রতি যথাযত আচরণ করে তাহলে সে তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী হবে। ( মুসলিমণ্ড৬৮৬২)

স্ত্রীর অধিকার: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। নারী যখন স্ত্রী, তখন পবিত্র কোরআনে তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের লেবাস, তোমরা তাদের লেবাস। (সূরা বাকারা-১৮৭) স্ত্রীদের ও পুরুষদের উপর ন্যায়সঙ্গত অধিকার যেমন নারীদের উপর পুরুষদের রয়েছে। (সূরা বাকারা-২২৮) তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে জীবনযাপন কর। (সূরা নিসা-১৯) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। (সূরা রুমণ্ড২১)

স্ত্রীদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)

জননী বা মায়ের অধিকার: ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। বাবা মায়ের খেদমত আল্লাহর ইবাদাতের সমতুল্য। তাদের কোনো কাজে উহ শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করা হারাম। (সূরা ইসরা-২৩)। গর্ভধারণ, জন্মদান ও দুগ্ধদান এ তিনটি বিষয়ে পিতার অংশীদারত্ব নেই বিধায় বাবার চেয়ে মায়ের অধিকার তিনগুণ বেশি। (সূরা আহকাফ- ১৫)

রাসূল (সা.) বলেছেন মাকে পিতা-পুত্র ও সব মানুষ থেকে বেশি ভালোবাসতে হবে। (বুখারী- ১৫) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সম্পত্তির অধিকার একটি সর্বজনীন মানবাধিকার, এটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত। এই অধিকারটি এই নীতিতে ভিত্তি করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জমিসহ সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে। সে যুগে নারীরা পিতা-মাতা বা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হতো। আধুনিক যুগেও কিছু কিছু দেশে মহিলাদের তাদের নিজস্ব সম্পত্তির মালিক হতে বা তাদের পিতামাতা বা স্বামীর কাছ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ারও অনুমতি নেই। পাশ্চাত্যবাদীরা নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের ঘরছাড়া করেছে। পশ্চিমা মতবাদ অনুযায়ী নারী-পুরুষ সবাই স্বাধীন। কেউ কারও দায়িত্ব গ্রহণ করবে না, অধীনস্থ থাকবে না, সবাই উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করবে। এজন্য প্রাশ্চাত্যে সন্তান বড় হয়ে গেলে মা-বাবা ও সন্তান কেউ কারও খোঁজ-খবর রাখে না, দায়িত্ব বহন করে না। এভাবে পশ্চিমা সভ্যতা নারীকে ঘর থেকে বের করে সেক্সডল বানিয়েছে, পণ্যের মতো ভোগের সামগ্রীতে রূপান্তর করেছে। অন্তহীন যৌন স্বাধীনতা দিয়েছে এবং জারজ সন্তান উৎপাদনের সনদ দিয়েছে। পাশ্চাত্যবাদীরা আজ নারীদের অপরের ইচ্ছার পুতুল বানিয়ে তাদের বাজারের পণ্য ও ফ্যাশনের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করছে এবং খদ্দেরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। যেমন- নারীদের নগ্ন ও অশ্লীল ছবি, নারীবিষয়ক নানা অশ্লীল গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অশ্লীল সিনেমা ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত