ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

ছাত্র ও শিক্ষকদের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনের ফলে দেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালগুলো হচ্ছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিইউ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এর মধ্যে কুয়েট প্রায় তিন মাস এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এক মাসের মতো বন্ধ রয়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের এক নেতা খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষাবিদরা আশঙ্কা করছেন, ক্লাস ও পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটায় যথাসময়ে সিলেবাস সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। সেশন জট তীব্র আকার ধারন করবে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এতে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে বরাবরই শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন, সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দেড়যুগের শাসন অবসানে শিক্ষার্থীরাই অগ্রভাগে থেকে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের উদ্যোগ ও নেতৃত্বেই হাসিনার পতন ও পলায়ন ঘটে। জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সব আন্দোলন সফল করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে শিক্ষায় মনোনিবেশ করেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি মানুষ সবসময়ই সহানুভূতিশীল। তবে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধের মাধ্যমে জনভোগান্তি সৃষ্টি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কথায় কথায় আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করাকে সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখেছে না। এতে জনদুর্ভোগ তো হচ্ছেই, অন্যদিকে তাদের পড়াশোনায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে। মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়ে অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। সড়ক পথে তীব্র যানজট সৃষ্টি ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বিমান যাত্রী, বন্দরে মালামাল পৌঁছানো, কর্মস্থলে যথাসময়ে হাজির হতে না পারার কারণে জানমালের বিপুল ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। তবে তা জনভোগান্তি সৃষ্টি করে আদায় করতে হবে, এটা কেমন কথা! মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। তাদের মনে রাখা দরকার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশকে এমন এক অবস্থায় রেখে গেছে যে, অর্থনীতি বলতে কিছু ছিল না। অর্থনীতির এক ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। শূন্য হাতে সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তার হাতে টাকা নেই। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, উৎপাদনে শ্লথগতির কারণে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নাজুক। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া পূরণ করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। সরকারের পক্ষে এ মুহূর্তে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের বাস্তব এ পরিস্থিতি বুঝতে হবে। তারা এখন যে দাবিদাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, বিগত দেড় দশকে তাদের এই দাবিদাওয়া কোথায় ছিল? সে সময় কেন তারা আন্দোলন করেনি? এখন কেন করছে? এসব প্রশ্নের উত্তরও তাদের দিতে হবে। তাদের এ বিষয়টিও আমলে নেয়া দরকার, পতিত ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, তাদের দোসর এবং মোদি সরকার অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই তাকে ফেলে দিতে দাবিদাওয়া আদায়ের নামে ষড়যন্ত্রমূলক আন্দোলন করেছে। এখন যে, তাদের আন্দোলনে সেই ষড়যন্ত্রকারিরা স্যাবোটাজ করছে না, তার গ্যারান্টি কে দেবে? কোনো কোনো জায়গায় শিক্ষার্থীরা হামলার শিকারও হচ্ছে। এতে তাদের আন্দোলন মানুষের কাছে ‘সন্দেহজনক’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে বিবেচিত হওয়া অমূলক নয়।

আমরা বারবার বলেছি, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে। নিত্যপণ্যের দাম মানুষের হাতের নাগালে রাখা, যানজট নিরসন, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন ইত্যাদি জরুরি কাজগুলো সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া। দেখা যাচ্ছে, সরকার এসবের দিকে খুব কম মনোযোগ দিচ্ছে। সে দীর্ঘ মেয়াদি বড় বড় প্রকল্পের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের নিত্যকার সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সংস্কার নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। সংস্কার করতে কেউ মানা করেনি। তবে এগুলো করতে গিয়ে মানুষের নিত্যকার সমস্যা সমাধানের বিষয় উপেক্ষা করা বা কম গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়। এতে সরকারের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্রসহ নানা শ্রেণির আন্দোলন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে দিচ্ছে। চার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অচলাবস্থা চলছে, তা কীভাবে নিরসন করা যায়, এ নিয়ে সরকারের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য সৃষ্টি করা দরকার। এ ব্যাপারে ছাত্র সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে কি না, বা কোনো ফাঁদ পেতেছে কি না, তা তাদের দেখতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তিনি দেশে-বিদেশে বহু মোটিভেশনাল বক্তৃতা দিয়েছেন। ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে, সেখানে তার অগ্রণী ভূমিকা থাকতে হবে। যা কিছু করার তাকেই করতে হবে। কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সে উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরাতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগী করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়া যাবে না। ব্যর্থ হলে দেশের ক্ষতি হবে, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। এর দায় সরকার এড়াতে পারবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত