ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সংকটে শিল্প খাত

কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ এবং গ্যাস-বিদ্যুতের স্বল্পতায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাসের চাপ না থাকলেও বিল দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট নিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, শিল্পমালিকরা উৎপাদন করতে না পারলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেবেন কোত্থেকে? আর ঋণের সুদ পরিশোধই বা করবেন কীভাবে? তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কোরবানির ঈদের পর অনেক শিল্পকারখানাকে কোরবানি দিতে হবে। এদিন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনগুলোর নেতারা বিদ্যমান সংকটকে শিল্প ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) দেশি বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট দিতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘদিন ধরেই শিল্প খাত জ্বালানি সংকটে নিমজ্জিত। তীব্র গ্যাস সংকট তো আছেই, দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপও সৃষ্টি হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, মূল্যবৃদ্ধি করা হলেও জ্বালানি সংকটের সুরাহা সরকার করতে পারেনি। আমরাও বলে আসছি, পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে অনেক কারখানা বন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। শিল্পমালিকরা বলছেন, সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। পণ্য না পেয়ে বিদেশি বায়াররা চলে যাচ্ছেন অন্য দেশে। লোকসানে জর্জরিত এ খাতের ওপর আবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ সুদের ঋণের কিস্তি। আর্থিক চাপের কারণে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ তাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি হওয়া, কর্মী ছাঁটাই ও ভয়াবহ শিল্পমন্দার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মনে রাখা দরকার, শিল্পকারখানা যদি জ্বালানি সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি অর্থের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। আবার গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে, যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিতে, এমনকি বাতিলও করতে পারেন। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এমন সংকটের সুযোগ নিয়ে বাজার দখল করলে ক্ষতিটা শুধু শিল্প খাতেরই হবে না, দেশের অর্থনীতিরও হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে তাই দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। ভুলে গেলে চলবে না, শিল্প খাতের এমন সংকটে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী দুষ্টচক্র যেমন তৃপ্তি পাবে, তেমনি পর্যায়ক্রমে পরনির্ভরশীল হয়ে এ খাত ধ্বংস হলে সরকারও হারাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এ শিল্প টিকে না থাকলে শুধু দেশের অর্থনীতিতেই যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা নয়; সেই সঙ্গে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাও রয়েছে। সরকার বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে শিল্প খাতকে বাঁচাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত