ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত সম্পন্ন করা হোক

জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত সম্পন্ন করা হোক

জুলাই আন্দোলনের এক বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র বা সনদ এখনও প্রণয়ন করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এমন পটভূমিতে এ সনদের গুরুত্ব বাড়ছে। জুলাই যোদ্ধারা গত ডিসেমবরে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। বলা চলে সে ধারাতেই কাজ চলছে। গত ৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই মাসেই একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে জাতির সামনে উপস্থাপনের আশাবাদ প্রকাশ করেন। আমরা মনে করি সরকার তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। এ ক্ষেত্রে আর কালক্ষেপণ করা উচিৎ হবে না। আশার কথা সরকার সে লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে।

গত শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান’ শীর্ষক খবরে সে কথাই ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়, জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে বলে কমিশন সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান।

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তাদের অনন্য ভূমিকা ও প্রচেষ্টার জন্য শুভেচ্ছা জানান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি বৈঠক টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ায় সকলেই এ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো দেখতে পাচ্ছেন। দেশ-বিদেশের মানুষ ব্যাপকভাবে এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। কাজেই পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে, মানুষের কাছে এভাবেই দৃশ্যমান থাকতে হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে আটটি বিষয়ে আলোচনার পর ঐকমত্য হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ। এছাড়া আরও সাতটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আলোচনা চলমান আছে বলে জানান তিনি। সরকারের এ উদ্যোগ ও সদিচ্ছাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি শত শত তাজা প্রাণের বিনিময়ে সাড়ে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার উৎখাতের মধ্যদিয়ে জাতি যে ঐক্য-সংহতির প্রকাশ ঘটিয়েছে তা এ ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে আরও সংহত হবে। রাষ্ট্রীয় সংস্কার, ফ্যাসিস্ট ও হত্যাকারীদের বিচার শেষে অনুষ্ঠেয় আসন্ন নির্বাচন গণতন্ত্রের ভিতকে সুসংহত করবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য ও কর্মসূচিতে ভিন্ন ভিন্ন মতো ও পারস্পরিক সমালোচনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ভিন্ন ভিন্ন মত ও পারস্পরিক সমালোচনা সত্ত্বেও এ সনদ ঘোষণার মধ্যদিয়ে তাদের মধ্যে ঐক্যের একটা যায়গা তৈরি করা সম্ভব আর সেটা এ বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানকে ধরে রাখতে, বিজয়ের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সহায়ক হবে। আমরা অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র সম্পন্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে অনুরোধ জানাই। আমরা মনে করি আগামী ৫ আগস্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উৎখাতের প্রথম বার্ষিকী এভাবেই মহিমান্বিত হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত