ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : সতর্কবার্তাটি অনুধাবন করতে হবে

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : সতর্কবার্তাটি অনুধাবন করতে হবে

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়াবহ ঘটনাটির পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘনবসতিপূর্ণ শহরে বিমানের প্রশিক্ষণ কেন? এটি কি শহরের বাইরে কোনো ফাঁকা এলাকায় হতে পারত না? প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, দেশে আগেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেসব বিমান কোনো ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনেনি। গত সোমবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনাটিও এড়ানো যেত, যদি ওই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের উড্ডয়ন হতো শহরের বাইরে কোনো ফাঁকা স্থানে। তাহলে শিশুসহ এতগুলো মানুষকে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিতে হতো না। বস্তুত মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়; এটিকে একটি ব্যস্ত রানওয়ের পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের মতো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ নগর পরিকল্পনার এক মর্মান্তিক পরিণতি হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, বিমানবন্দরের রানওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য ‘হাই-রিস্ক জোন’ বা সর্বোচ্চ ঝুঁকির অঞ্চল। এ ধরনের স্থানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করার সিদ্ধান্ত শিশুদের জীবনকে সরাসরি বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার শামিল। কেননা বিমান উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় যান্ত্রিক ত্রুটি, বৈরী আবহাওয়া বা পাইলটের সামান্যতম ভুলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা না ঘটলেও রানওয়ের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই রানওয়ের পাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবন থাকা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) নির্দেশনা অনুযায়ী, বিমানবন্দরের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘বাফার জোন’ বা নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসাবে রাখা বাধ্যতামূলক, যেখানে স্কুল, হাসপাতাল বা ঘনবসতিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অথচ এ নগরীতে রানওয়ের পাশে বা কাছাকাছি স্থানে রয়েছে আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অবশ্য বিমানবন্দর সম্প্রসারণের ফলেও অনেক ভবন রানওয়ের নিকটবর্তী হয়ে গেছে। এক্ষেত্রেও সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার ঘাটতিকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি আমাদের জন্য যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, সেটা অনুধাবন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এখন উচিত হবে বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি নিরীক্ষা করা; আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে কঠোরভাবে ‘বাফার জোন’ প্রতিষ্ঠা এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের জন্য লোকালয় থেকে দূরে বিস্তীর্ণ মাঠ বা চরাঞ্চল অথবা অন্য কোনো জায়গায় স্বতন্ত্র রানওয়ে নির্মাণ করা। ঢাকা একটি জনবহুল শহর, যেখানে রয়েছে ঘনঘন সুউচ্চ ভবন। এমন একটি শহরে যে কোনো দুর্ঘটনা অনেক মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। কাজেই এ ঝুঁকি নিরসনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমান চালানো না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে বিকল্প রানওয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত