ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে ৯৩ শতাংশ মানুষ

প্রসঙ্গ : ডাকসু নির্বাচন-২০২৫
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে ৯৩ শতাংশ মানুষ

বিগত সরকারের পতনের পর গত বছর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে ৯৩ শতাংশ মানুষ’ এই শিরোনামে একটি জরিপের প্রতিবেদন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন ৯৩ শতাংশ মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারী অবশিষ্টদের মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত নয়। আর দুই শতাংশ মানুষ কোন মত দেননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা প্রথমে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলেও পরে পরিস্থিতির কারণে ও দেশের স্বার্থে নয় দফা দেয়। এ ৯ দফার সপ্তম দফাতে বলা হয়েছে, ‘দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কারণে বাংলাদেশে সুদীর্ঘকাল ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজগতা চলে আসছিল। এ প্রসঙ্গে বিগত ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কালের কণ্ঠ পত্রিকার পৃষ্ঠা-১২তে’ কলেজগুলো রাজনীতির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই শিরোনামে লেখার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করছি। এ লেখাতে বলা হয়েছে- ‘রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের কলেজগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ।

এছাড়া কলেজগুলো ঠিকভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে না বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। গত =সোমবার ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। উপাচার্য বলেন, রাজনীতি করতে চাইলে কলেজের বাইরে করবেন, কলেজের ভেতরে না। রাজনীতি করে বাংলাদেশের সব কলেজগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাত্ররাজনীতির কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার মান এত অবনতি হয়েছে যে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২৪ সালের বিশ্ব ব্যাংকিংয়ের প্রথম ৮০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। অন্যদিকে টাইমস হায়ার এডুকেশনের এশিয়া ইউনিভার্সিটি ব্যাংকিং-২০২৪-এর এশিয়ার সেরা ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতে নাম নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের। এক সময়কার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও অনেক নিচে। টাইমস হায়ার এডুকেশনের এ তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে ৪০১-৫০০ এর মধ্যে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ছাত্রদের তথা দেশের কথা চিন্তা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবর্গ তাদের ৯ দফাতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দফাটি অন্তর্ভুক্ত করে জনগণের অভাবনীয় সমর্থন পায়। উক্ত জরিপের ফলাফল থেকে তাই দেখা যায়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিসহ সকল প্রকার দলীয় রাজনীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সম্পর্কে ’বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায় ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি বন্ধ’ এ শিরোনামে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা ও পৃষ্ঠা-১১ তে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সব প্রকার দলীয় রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্য লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ এ প্রতিবেদনে পত্রিকার পৃষ্ঠা-১১ তে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।’ শিক্ষকরাজনীতিও ছাত্রদের সুষ্ঠুভাবে লেখাপড়া করার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে শিক্ষক রাজনীতিও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ শিক্ষক রাজনীতির কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবর্গ বিগত সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ বছরের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে শুক্রবার দিবাগত রাতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এর কারণ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের ১৮টি হলে এ দিনে নতুন হল কমিটি ঘোষণা করা। ছাত্রদলের এ হল কমিটি ঘোষণা করার মাধ্যমে হলে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোকে জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার সপ্তম দফা অর্থাৎ লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে হলের ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হন। বিভিন্ন হল থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ওই দিনই দিবাগত রাত ১২টার দিকে টিএসসি গোল-চত্বরে সমবেত হন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ সমাবেশে এসে আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে আশ্বাস দেন। এরপর রাত তিনটার দিকে ছাত্ররা হলে ফিরে যায়।

ছাত্রদলের এ হল কমিটি ঘোষণা সম্বন্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ১০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আমার দেশ পত্রিকায় ‘ঢাবির হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস’ শিরোনামের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, রোকেয়া হলের তাসলিমা সুলতানা বলেন, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় তৈরি করছে, এটা চিরকালের জন্য বন্ধ করতে হবে।’ এ প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মুন্নি প্রশ্ন তোলেন, এত জীবন উৎসর্গের পরও কেন হলে নোংরা রাজনীতি ফিরবে? আর কত জীবন দিলে এটি বন্ধ হবে?’

এরকম পরিস্থিতিতেও ছাত্রদল তাদের ঘোষিত হল কমিটি না ভেঙে হলগুলোতে ও ডাকসুতে নির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে গত ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ও সপ্তম পৃষ্ঠায় ’ঢাবির হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল ছাড়া প্যানেল দেয় নি অন্য সংগঠন’ এ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে। এ প্রতিবেদনে পৃষ্ঠা-৭ এ বলা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আমরা আমাদের দলের রীতি অনুযায়ী হল সংসদের প্যানেল ঘোষণা করেছি। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো হলের ছাত্রদের তীব্র বিরোধিতার কারণে হল সংসদ নির্বাচনে প্যানেল না দিলেও তারা এক বা একাধিক সংগঠন মিলে নির্দলীয় রূপ দিয়ে ডাকসুতে প্যানেল দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছাত্ররাজনীতির প্রতি নিষেধাঞ্জা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার সপ্তম দফাতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি থাকায় তারা এ কৌশল নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির অবসানসহ ছাত্রদের সার্বিক স্বার্থে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক অন্যতম সমন্বয়ক ও মুখপাত্র জনপ্রিয় ছাত্রনেত্রী উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র একটি প্যানেল নির্বাচন করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত