প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গণসহিংসতা (মব ভায়োলেন্স), খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ, কার্যকরভাবে কঠোর অবস্থান নিতে পারছে না।
বিভিন্ন মহল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, অনেক পুলিশ সদস্য মব আতঙ্কে ভুগছেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে ৩৩৪টি গণসহিংসতার ঘটনার মধ্যে ২১৯টিতেই পুলিশ সদস্যরা হামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি থানা আক্রমণ ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
বারবার এ ধরনের আঘাতে পুলিশের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যার ফলে তারা পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে পারছেন না। দ্বিতীয়ত, সরকারের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার নীতি’র কারণে কার্যকরভাবে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের দ্বিধাবোধ কাজ করছে। অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করছে। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা, যারা আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতেন, তাদের সহযোগিতা আর পাওয়া যাচ্ছে না। এই রাজনৈতিক সহযোগিতার অভাব অপরাধ দমনে এক বড় বাধা হিসাবে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে, তখন অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উসকানিদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে এসেছে। এ পরিস্থিতি প্রমাণ করে, আইনের শাসন কার্যকর করতে হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের প্রধান দায়িত্ব; কিন্তু পুলিশ সদস্যদের ওপরই যখন ক্রমাগত হামলা হয়, তখন জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবেই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ সংকট নিরসনে সরকারের উচিত পুলিশ বাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। একইসঙ্গে অপরাধ দমনের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। অন্যথায়, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভবিষ্যতে আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটাই প্রত্যাশা।