প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। খুনোখুনি যেন নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। দুইদিনে ৯ জেলায় ১১ জন খুন হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। মব ভায়োলেন্স, চাঁদাবাজি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই রাতে নয়, দিনে-দুপুরেও ঘটছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা অনেক বেড়েছে।
অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কিশোর গ্যাং নামে অরাজকতা সৃষ্টির প্রতিযোগিতা চলছে। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘাত-সংঘর্ষ। বেড়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। ফলে দেশজুড়েই মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।
প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচার শাবলের আঘাতে সানোয়ার হোসেন নামে এক জামায়াত নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন তার মা ও ভাই। গত শনিবার দুপুরে রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভোলা সদর উপজেলার উত্তর চরনোয়াবাদ এলাকায় শনিবার রাতে নিজ বাসায় কুপিয়ে জখম করা হয় হেফাজতে ইসলামের নেতা ও মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আমিনুল হক নোমানীকে।
ভোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোববার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ ইটবাড়িয়া গ্রামে নিজ ঘর থেকে স্বামীর ফাঁস দেওয়া এবং স্ত্রীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কুমিল্লা নগরীর একটি বাসা থেকে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনই ঘটনা ঘটেছে আরও কয়েকটি জেলায়।
অন্যদিকে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়ে সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার আস্তানায় হামলা, ভাঙচুর ও লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীতে একটি খানকায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এছাড়া মব সৃষ্টি করে অনেকের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। সার্বিকভাবে এগুলো সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই উসকে দিচ্ছে। এই অবস্থায় আসছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। স্বাভাবিকভাবেই পূজার সময়ের নিরাপত্তা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল শঙ্কা বিদ্যমান।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আসন্ন দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টা হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব নির্দেশ দেন। বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিস্তারিত জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও থমকে যায়। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।