ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নাশকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন

নাশকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে গত সোমবার ঢাকায় বাসে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সোমবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুটি এবং উত্তরায় একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মামলায় রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ হবে আগামীকাল ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। দিনটি ঘিরে ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। খবরে প্রকাশ, দিনটিকে সামনে রেখে সরকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিজ নিজ জেলায় বাড়তি সতর্কতা নিতে বলেছে। এরই মধ্যে তারা জেলার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা রোধে জেলায় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সতর্কতামূলক বাড়তি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ১৩ তারিখের ‘লকডাউন’ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে পারবে না আওয়ামী লীগ। মাঠে নামলেই দলটির নেতাকর্মীদের আইনের আওতায় আনা হবে। লকডাউনের কর্মসূচিতে কেউ মাঠে নামলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোহাম্মদ মনোয়ার হোসাইন তামিম। তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতিতে যা-ই হোক, ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। এ ছাড়া ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে না। ওইদিন কবে রায় ঘোষণা করা হবে, সেই দিন ঠিক করা হবে। এদিন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হবে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নাগরিকরা এগিয়ে এলে এসব চোরাগোপ্তা ককটেল হামলা ঠেকানো সহজ হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক মতভেদ ও আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা কখনোই সহিংসতা বা ধ্বংসের পথ অনুসরণ করতে পারে না। জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করে, যানবাহনে আগুন দিয়ে বা ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের যে প্রচেষ্টা, তা নিন্দনীয় ও আইনের চোখে দণ্ডনীয়। এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, ক্ষুণ্ন হয় দেশের স্থিতিশীলতা। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক, কৌশলী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে হবে প্রমাণনির্ভর তদন্তের মাধ্যমে। তবে নাগরিক অধিকারের বিষয়েও সংবেদনশীল থাকতে হবে, যেন নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।

আমরা মনে করি, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শুধু প্রশাসন দিয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা যাবে না। প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্যোগ জরুরি। নাশকতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মতভেদ থাকা স্বাভাবিক, তবে দেশের মধ্য শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায়ে রাখতে এবং গণতান্ত্রিক যাত্রাকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত