ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে

জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে

ঢাকা শহর আজ এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি। খুন, অপহরণ, সংঘাত, সংঘর্ষ, ডাকাতি, ছিনতাই লেগেই আছে। গত ১৪ মাসে রাজধানীতে ৪৫৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। প্রতি মাসে গড়ে ৩০টির বেশি খুনের ঘটনা যেকোনো সভ্য শহরের জন্য আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতির সংকেত। এর চেয়েও ভয়াবহ হলো হত্যাকাণ্ডের ধরনে পরিবর্তন। নিষ্ঠুরতার চরম বহিঃপ্রকাশ। লাশ পাওয়া যায় টুকরা ও বিকৃত অবস্থায়। নদী-ড্রেন থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। খুনের পর দ্রুত যাতে শনাক্ত না করা যায়, সে জন্য পরিকল্পিতভাবেই নানা নিষ্ঠুর পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এসবই বোঝায় অপরাধ এখন কতটা সংগঠিত এবং কতটা নির্মম।

ধারণা করা হয়, রাজনৈতিক সংঘাত, আধিপত্য বিস্তার, পারিবারিক বিরোধ, প্রেমঘটিত টানাপড়েন ও আর্থিক রেষারেষি খুনের প্রধান কারণ। কিন্তু সাম্প্রতিক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কতটা প্রকাশ্য ও নিশ্চিন্তভাবে খুনিরা তাদের অপারেশন চালাচ্ছে। মুখোশ ও অস্ত্রধারী ব্যক্তি যখন দোকানের ভেতরে ঢুকে একজনকে গুলি করে চলে যেতে পারে এবং সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে শুধু আতঙ্কে নিথর হয়ে দেখতে পারে, সেটি নগর নিরাপত্তার চরম বিপর্যয় ছাড়া আর কিছু নয়।

অন্যদিকে গণপিটুনিতে ২১৬ জনের মৃত্যু আমাদের সামাজিক অসহিষ্ণুতা ও আইনবহির্ভূত বিচারপ্রবণতার ভয়াবহ রূপ তুলে ধরে। একই সঙ্গে সহিংসতা, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, মাদক বাণিজ্য ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বৃদ্ধি উদ্বেগকে আরো ঘনীভূত করেছে।

বিশেষভাবে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অনেক অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা যায়নি। গণমাধ্যমের খবর, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রচুর অস্ত্র প্রবেশ করছে। দেশীয়ভাবেও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির খবর পাওয়া যায়।

পুলিশ বলছে, তারা তৎপর, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, তৎপরতার চেয়ে সমন্বয়হীনতা ও দুর্বলতা বেশি দৃশ্যমান। পুলিশের যথাযথ ভূমিকার অভাব মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নির্বাচন যত কাছে আসবে, পরিস্থিতি তত বেসামাল হতে পারে। তাই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক অভিযান চালানো প্রয়োজন। গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আরও জোরদার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মারাত্মক অপরাধ দমনে যৌথ বাহিনীর অভিযান আরো জোরদার করতে হবে। নইলে রাজধানী শুধু নয়, সারা দেশেই অপরাধের বিস্তার জনদুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত