ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কর ন্যায্যতায় দ্বিচারিতা

কর ন্যায্যতায় দ্বিচারিতা

দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে রাজস্ব আদায়ের বিকল্প নেই। অথচ প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক খবরে দেখা যাচ্ছে, বিগত সরকারের একটি বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে সরকারের ৮২ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও আয়করের বাইরে রয়ে গেছেন। এটি কেবল অর্থনৈতিক অসংগতিই নয়, এটি সমাজের বৃহত্তর অংশের প্রতি স্পষ্ট অবিচার এবং রাজস্ব নীতির ক্ষেত্রে এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও বটে। সরকারি কর্মীদের বাড়তি সুবিধা দিয়ে বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর চাপানো পূর্ণাঙ্গ কর কাঠামো স্পষ্টত একটি দ্বৈত ও চরম বৈষম্যমূলক নীতি।

২০১৭ সালের এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের শুধু মূল বেতন করযোগ্য করার এমন অদ্ভুত নীতির কারণেই মূলত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি কর্মজীবীদের মোট আয়ের ওপর কর দিতে হলেও সরকারি কর্মচারীরা বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, মহার্ঘ্য ভাতাসহ বিপুল পরিমাণ অর্থের করমুক্ত সুবিধা পাচ্ছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই দ্বৈতনীতি সরকারি চাকরিজীবীদের একটি ‘প্রিভিলেজড’ বা ‘এলিট শ্রেণি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করছে। বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়ার পরও ৪ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতি থাকার নজিরবিহীন সুযোগ এই বৈষম্যকে আরও তীব্র করেছে। সরকারি কর্মচারীদের বছরে ৮৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বেতন-ভাতা দেওয়ার বিপরীতে মাত্র ১৬১ কোটি টাকা আয়কর আদায় করা কোনোভাবেই রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতার পরিচয় হতে পারে না। বিগত সরকারের আমলে আইএমএফ এবং স্বয়ং এনবিআর সরকারি ভাতার ওপর করারোপের উদ্যোগ নিলেও উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তা বাতিল হয়ে যাওয়া প্রমাণ করে, শীর্ষ পর্যায়ে এ বৈষম্য টিকিয়ে রাখার অশুভ ইচ্ছা ছিল।

আমরা মনে করি, পেশা বা পদমর্যাদার ভিত্তিতে করের আইন ভিন্ন হতে পারে না। কারণ, কর ন্যায্যতার প্রশ্নে সব নাগরিক সমান। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য দূর করার যে অঙ্গীকার করেছে, কর আদায়ের মতো মৌলিক ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা দূরীকরণের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটবে নিশ্চয়ই। ভুলে গেলে চলবে না, বিগত সরকারের এই নীতি যে কেবল রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে, তাই নয়; সমাজে বিভেদ ও অসন্তোষও বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের মতো সরকারি কর্মচারীদেরও প্রাপ্ত সবরকম ভাতা ও বোনাসকে অবিলম্বে করের আওতায় আনা জরুরি। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোর স্বার্থে কালক্ষেপণ না করে সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত