ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য : আচরণগত সংকট নাকি সিস্টেমের ব্যর্থতা

জান্নাতুল ফেরদাউস অহনা, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য : আচরণগত সংকট নাকি সিস্টেমের ব্যর্থতা

শহরের রাস্তাঘাটে প্রতিদিনই দেখা যায় একই দৃশ্য- সিগন্যাল লাল; কিন্তু গাড়ি ছুটছে। পথচারী, রিকশাচালক, মোটরসাইকেল আরোহী থেকে শুরু করে প্রাইভেটকার- কেউই আর পুরোপুরি নিয়ম মানতে আগ্রহী নয়। এতে সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে, বাড়ছে দুর্ঘটনা, আর সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এটা কি মানুষের আচরণের ভুল, নাকি ট্রাফিক ব্যবস্থার ত্রুটি?

এক্ষেত্রে, মানুষের আচরণ ও নিয়ম মানতে অনীহা বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে-

বেশিরভাগ মানুষ ট্রাফিক আইনকে গুরুত্ব দেয় না। অনেকে ভাবেন- ‘একটু এগিয়ে গেলে কিছু হবে না।’ এই মনোভাবই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। পথচারীরাও অনেক সময় সবুজ সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা না করে ব্যস্ততার মধ্যে রাস্তা পার হতে চান। এতে নিজের জীবন তো ঝুঁকিতে পড়েই, অন্যদেরও সমস্যায় ফেলেন।

শুধু মানুষের আচরণ নয়, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ত্রুটিও সিগন্যাল অমান্যকে উৎসাহিত করছে। অনেক সিগন্যালই ঠিকমতো কাজ করে না, কোথাও লাইট জ্বলে আবার কোথাও নষ্ট। অনেক জায়গায় সিগন্যালের সময়সীমা অযৌক্তিক হওয়ায় চালকরা বিরক্ত হয়ে পড়েন এবং নিয়ম উপেক্ষা করতে শুরু করেন।

ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পসংখ্যক জনবল, প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার এবং সিসিটিভি মনিটরিংয়ের দুর্বলতাও নিয়ম ভাঙার প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সিস্টেম কার্যকর না হলে মানুষও নিয়ম মেনে চলতে আগ্রহ হারায়।

ফল স্বরূপ, ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন-সিগন্যাল অমান্য করে এগিয়ে যাওয়া ছোট বিষয় নয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, সিগন্যাল না মানার কারণে শহরে যে ধরনের সংঘর্ষ ঘটে, সেগুলো বেশিরভাগই গুরুতর এবং প্রাণঘাতী। লালবাতি ভেঙে হঠাৎ ছুটে আসা মোটরসাইকেল বা দ্রুতগামী গাড়ি- এক মুহূর্তেই কেড়ে নিতে পারে একটি প্রাণ, বদলে দিতে পারে একাধিক পরিবারের ভবিষ্যৎ। তাই নিয়ম ভাঙা কখনোই ‘ছোটখাট ভুল’ নয়- এটা জীবন-মৃত্যুর বিষয়।

তাই এই গুরুতর সমস্যার সমাধান হিসেবে- মানুষ ও সিস্টেমণ্ড দু’টোই ঠিক করতে হবে:

কড়া আইন প্রয়োগ : সিগন্যাল ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা ও শাস্তি দিতে হবে।

প্রযুক্তির ব্যবহার : স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা ও স্মার্ট সিগন্যাল চালু করলে নিয়ম ভাঙা কমবে।

সিগন্যাল ঠিক রাখা : ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল দ্রুত মেরামত ও সময় ঠিক রাখা জরুরি।

সচেতনতা বাড়ানো : নিয়ম মানা শুধু আইন নয়- জীবন রক্ষার জন্যও দরকার। এ বার্তা সবাইকে বুঝতে হবে।

ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করার প্রবণতা কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়- এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং শহর ব্যবস্থাপনার সমন্বিত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। যদি আমরা এখনই নিয়ম মানার অভ্যাস ফিরে না পাই এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর না করি, দুর্ঘটনার সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকবে।

একটি নিরাপদ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও আধুনিক শহর গড়তে হলে মানুষ ও সিস্টেম- দু’য়েরই পরিবর্তন জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এলে বাঁচবে জীবন, বাঁচবে শহরের ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত